অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল ২০২৩ প্রত্যাহারের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরী, কাভার্ডভ্যান ও সিএনজি অটো রিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপি প্রদান।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ এপ্রিল ২০২৩ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বা.জা.স বিল নং- ১২/২০২৩ উত্থাপিত হয়েছে। যদিও এই বিলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বলতে ১৮টি সেক্টরকে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রধানত লক্ষবস্তু করা হয়েছে পরিবহণ খাতকে। ফলে পরিবহণ খাতের শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে তাদের উপর কাজের চাগ, নিপীড়ন ও বঞ্চনা আরও বাড়বে কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ বা অধিকার থাকবে না।
অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল নামে এই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, “আপাত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে। ফলে এই বিল আইনে পরিনত হলে শ্রম আইনের উপর এই আইন প্রাধান্য পাবে। অথচ শ্রম আইনে বলা হয়েছে। এই আইনের অন্যত্র ভিন্নরূপ কিছু নির্ধারিত না থাকিলে, এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হইবে। সে কারণে আমাদের আশঙ্কা যে, এই অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল আইনে পরিনত হলে তা শ্রম আইনকে অকার্যকর করে ফেলবে। কারণ, শ্রম আইনের ২০৯ ধারায় শিল্প বিরোধ উত্থাপন, ২১০ ধারায় শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান আছে। বিরোধ নিস্পত্তির সকল পথ বন্ধ হয়ে গেলে ২১১ ধারায় ধর্মঘটের বিধান এবং পদ্ধতির উল্লেখ করা আছে। ফলে এই বিল আইনে পরিনত হলে শ্রম
আইনে ধর্মঘটের যতটুকু আইনসংগত অধিকার আছে সেটাও বাস্তবে কেড়ে নেয়া হবে । আমরা তীর বেদনার সঙ্গে উল্লেখ করছি যে, এই বিলের প্রারম্ভেই উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৫২ সালে অ্যাক্ট এবং ১৯৫৮ সালের অর্ডিন্যান্সকে সময়োপযোগী করিয়া কতিপয় চাকরি বা শ্রেণীর চাকরি বা সেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসাবে ঘোষনা, এতদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নকল্পে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিধান প্রনয়নকপ্লে আনীত বিল হিসেবে এই বিল উত্থাপন করা হচ্ছে।
আমরা মনে করি পাকিস্তানি পরাধীন আমলে যে আইনের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা আন্দোলন করেছেন তা আজ স্বাধীন দেশে সেই আইন কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। দেশের সকল পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমরা ১) এই বিল ট্রেড ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক কর্ম পরিচালনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং এই ভূখন্ডের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল কেড়ে নেয়ার সামিল। এই বিল আইনে পরিনত হলে তা হবে আইনএনও কনভেনশনের স্বীকৃত ধর্মঘটের মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক সুপারিশের পরিপন্থি। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, একান্ত বাধ্য না হলে ধর্মঘট শ্রমিকরা সাধারণত করে না, ধর্মঘট করতে চাইলে শ্রম আইনের বিধান মেনে করতে হয় এবং বেআইনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে শ্রম আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে তা সত্ত্বেও অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল উত্থাপন সচেতন শ্রমিকদের কাছে বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে এবং শ্রমিক অঙ্গনে অসন্তোষের বীজ বপন করে।
২) বর্তমানে শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান আছে। শ্রমিক সংগঠন, মালিক সংগঠন, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নানা ধরনের সংশোধন প্রস্তাবনা দিয়েছে। আইএলও কমিটি অফ এক্সপার্ট এর পর্যবেক্ষনকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সে সময় এই বিল উত্থাপন শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
৩) ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে এই বিল উত্থাপিত হয়েছে। শ্রম সংক্রান্ত যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টিসিবি মিটিং এর মাধ্যমে অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু ত্রি-পক্ষীয় কোন সভায় এই বিলের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয় নাই।
৪) এই আইন আন্তর্জাতিক পরিবহণ সংস্থার নীতিমালা, সুপারিশ এর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ফলে এই আইন প্রনীত হলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে।
সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা মনে করি পরিবহণ শ্রমিকদের ভীতি ও আতংকের মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা যায় না। বরং তা অসন্তোষ ও উত্তেজনার বীজ বপন করবে। অতএব, আমরা পরিবহণ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এই বিলের মর্মবস্তু এবং সংসদে বিল উত্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ও আপত্তি আপনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করছি। আমাদের সর্বশেষ ভরসা, সংসদ নেত্রী হিসেবে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক শ্রম পরিস্থিতির স্বার্থে এই বিল প্রত্যাহার করতে আপনি যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন করবেন, আমরা এই প্রত্যাশা করি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা সিএনজি অটো রিক্সা চালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস, মিনি বাস, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মোস্তফা ভান্ডারী, জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, ফিরোজ আলম বকুল, কোষাদক্ষ সাইফুল ইসলাম পলাশ, দপ্তর সম্পাদক এনায়েত হোসেন, কার্যকারী সদস্য সবুজ হোসেন পিন্নু।
জেলা বাস, মিনি বাস, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি চুন্নু মুন্সী, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেলু, প্রচার সম্পাদক হাফিজুল, দপ্তর সম্পাদ বাবুল, মাহবুব, ইব্রাহিম, মজিবর রহমান।
জেলা সিএনজি অটো রিক্সা চালক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম, চাষাড়া শাখার সভাপতি মো:নুরুল ইসলাম প্রমূখ।