নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রভাব বিস্তার ও আড়ত দখলকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে গুলিবর্ষণ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এসময় গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় রাফি আহমেদ স্বপন ও রাজু ভুইয়া নামে দুজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সাওঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ আড়ত নিয়ে জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী মুজিবর রহমানের বিরোধ চলে আসছিল।
ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের দাবি, সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন জমি ১০ বছরের জন্য তিনি চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেন। পরে সেখানে বালু ভরাট ও শেড নির্মাণ করে কাঁচাবাজারের আড়ত গড়ে তোলেন। বর্তমানে পেশিশক্তি খাটিয়ে আড়তটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন সেলিম প্রধান।
অপরদিকে, সেলিম প্রধানের দাবি, ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করে জোরপূর্বক জমি দখল করে আড়ত গড়ে তোলেন মজিবুর রহমান।
এদিকে আড়তটি দখল করতে সেলিম প্রধানের পক্ষ নেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান ও তার লোকজন।
দুপুরে আড়তের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়িতে মাসুদুর রহমানের লোকজন অবস্থান নেয়। এসময় আড়তের পাশের সড়ক দিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম তার নেতাকর্মীদের নিয়ে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল বের করেন। এসময় সেলিম প্রধানের বাড়ির ভেতর থেকে ওই মিছিলে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হয়।
এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতের মধ্যে রাজু ও স্বপন নামের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসময় সেলিম প্রধানের ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এসময় আতঙ্কে গাউছিয়া মার্কেট তাঁতবাজার, হাজী শপিং কমপ্লেক্সসহ আশপাশের মার্কেট ও হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নারায়ণগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সেলিম প্রধানের সঙ্গে মুজিবুর রহমানের বিসমিল্লাহ আড়ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। যেহেতু এখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আমরা অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাবো। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়তের আসল মালিক কে সেটির জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো।