আসন্ন শারদীয় দূর্গোউৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে পালন করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৮শে সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর চাষাঢ়ায় প্রয়াত গপিনাথ মন্দিরে এ সভার আয়োজন করা হয়।
এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা এ্যাড. খোকন সাহা। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা রানী পাল।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সার্বিক তত্বাবধানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও পানাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল পোদ্দার, এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব চক্রবর্তী, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ,সাধারণ সম্পাদক রন্জিত কুমার মন্ডল।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়নের নানা সমস্যা তুলে ধরেন উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমল বলেন, লক্ষী নারায়ণ মিল মন্দিরে যদি নিট কর্নসান গ্রুপ আমাদের পূজা করতে না দেয়, তাহলে সিদ্ধিরগঞ্জে আমরা কোন পূজা করবো না।
এছারাও বিভিন্ন উপজেলার মন্দিরের ভিতর ও বাহিরের নানা সমস্যা তুলে ধরেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দরা।
নেতৃবৃন্দের সমস্যা শুনে প্রধান অতিথি এ্যাড খোকন সাহা বলেন, যার যার ধর্ম, পালন করা তার নৈতিক দায়িত্ব। এবার নির্বাচনে মাত্র ৩-৪ মাস বাকি, আসন্ন শারদীয় উৎসব। একটি গোষ্টি আমাদের পূজার সময় অঘটন ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আপনারা প্রতিটা মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক এর ব্যবস্থা করবেন, আর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তো আছেই।
তিনি আরও বলেন, আপনারা সতর্ক অবস্থানে থেকে পূজার সকল আয়োজন করবেন। লক্ষী নারায়ণ মন্দিরে পূজা হয় এবং হবে। ওরা যদি পূজা করতে না দেয় তাহলে রাস্তায় পূজা মন্ডপ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীর কুমার সাহা বলেন, নারায়ণগঞ্জের কোথাও যদি কেউ অর্থের অভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে না পারে তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি চেষ্টা করবো যথা সম্ভব সহযোগীতা করার। এছাড়া, এখানে জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দরা আছেন, তারাও আপনাদের সহযোগীতা করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা পূজার পরে একটি বিজয়া পূর্ণমিলনী করবো। ড্রিম হলিডে পার্কে। ৫০জন করে ৭টি থানার কমিটিতে ৩৫০ জন আছেন। তবে শুধু তাই নয়, মোট ৫০০জনকে নিয়ে আমরা একদিন পূর্ণমিলনী করবো। সবাইকে আমি কার্ড দিয়ে দিবো, সবাই সেখানে থাকবেন।
প্রদীপ ঘোষ বলেন, এই লক্ষী নারায়ণ মন্দিরের সম্পত্তি আমাদের নিজস্ব। লক্ষী নারায়ণ, চিত্ত নারায়ণ, ঢাকেশ্বরি এগুলো আমাদের সম্পদ। আমরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করি না। এই লক্ষী নারায়ণ মিলের পূজা যদি বন্ধ হয়, তাহলে আপনাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। আমরা কিন্তু অন্য সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। আমাদের মাননীয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ওমরাহ করতে গেছেন, তিনি আসলে তার সাথে বসে আমরা এর একটি সমাধান পাবো বলে আশা করছি।
শিখন সরকার শিপন বলেন, সবাই সুন্দর ভাবে যাতে আমরা পূজাটা করি। দেশের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয়। জেলার সকল পূজা মন্ডপ সিটি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি কোন রকম উস্কানিতে পা দেয়া যাবে না। যদি কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিনবা আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
তিনি আরও বলেন, লক্ষী নারায়ণ মন্দিরের বিষয়ে নিট কর্নসান গ্রুপের সাথে বিভিন্ন ভাবে আলাপ-আলোচনা করেছি, মাননীয় এমপি সাহেবের সাথে আলাপ করেছি। এখন যদি কোন একটি সমাধান না হয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া কোন উপায় নেই। আমরা কারো দয়া চাই না। এটা আইনগত ভাবেই আমরা পাই। আমরা যদি এবার পূজা করতে না পারি তাহলে আমরা চরম আন্দোলন করবো এবং ওইস্থানেই পূজা হবে।
সভা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করা হয়। এছাড়াও
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের পাশাপাশি সদর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ প্রমূখ।