গ্রীষ্মকাল ও সেচ মৌসুম শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে রমজান মাসও। গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যাবে। চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত জ্বালানি আর ডলার সংকটের কারণে এবারও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাসের সংকট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।গ্যাসসংকটের মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মিত কাজের জন্য একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারছে না পেট্রোবাংলা। বন্ধ টার্মিনালটি চালু হবে মার্চের শেষ দিকে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখলে উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার্য কয়লা ও গ্যাস আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার। কিন্তু দেশে এখন ডলার সংকট চলছে।কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটা আবহাওয়া ও ডলারের ওপর নির্ভর করবে। আবহাওয়া বেশি গরম হয়ে গেলে বেশি পরিমাণে বিদ্যুতের উৎপাদন করতে হবে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল পরিশোধের জন্য ডলারের প্রয়োজন পড়বে। সেটা করতে না পারলে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে না।রমজান মাসে বিশেষ করে ইফতার, তারাবির নামাজ ও সাহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এরপরও প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাসের সংকট আরও প্রকট হতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদেররমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস দিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারাবি ও সাহরিতে লোডশেডিং হবে না। তবু যদি সংকট হয়, তবে দিনের কোনো একটা সময়ে লোডশেডিং হতে পারে।’বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতার মধ্যে ১০ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট গ্যাসনির্ভর, ৬ হাজার ১৯১ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েলনির্ভর, ৪ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট কয়লানির্ভর, ৮২২ মেগাওয়াট ডিজেলনির্ভর, ৬৮৯ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর এবং ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট আমদানি করা হয়।২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৩ পয়সা, কয়লায় ১১ টাকা ৫১ পয়সা, ফার্নেস অয়েলে ২৩ টাকা ৪২ পয়সা ও ডিজেল ৩৯ টাকা ৭২ পয়সা।পিডিবির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাসে ৫ টাকা ৮৩ পয়সা, ফার্নেস অয়েলে ৩৯ টাকা ৩ পয়সা ও ডিজেল ৮৯ টাকা ২৩ পয়সা ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় হতে পারে। ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে।গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় রমজান মাসে বিশেষ করে সাহরি, ইফতার ও তারাবির নামাজের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিতরণ সংস্থাগুলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর এবং হটলাইন নম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।