নতুন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এই সিলিন্ডার কিনতে অতিরিক্ত ২০০–৩০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রিকে অপরাধ বলে মনে করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আজ বুধবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এ সময় এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এলপিজির দাম সরকার যেটুকু বাড়ায়, খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয় তার চেয়ে বেশি। এমনটা হলে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের কোনো কার্যকারিতা থাকে না। খুচরা পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে ২০০–৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রাখা হচ্ছে। এটা আইনের ব্যত্যয়। এবার খুচরা বাজারে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেশি বেড়েছে, এ কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকার যে দামই বেঁধে দিক না কেন, বাজারে তার থেকে বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে। সভায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়ার সময় এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিলারদের থেকে কত টাকা রাখবে অর্থাৎ তাদের কমিশন কত হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার দেখা গেছে, ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি রাখছেন। তখন নিরুপায় হয়ে তাদেরও বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয়। এ সমস্যার সমাধান হলে ভালোভাবে ব্যবসা করা যাবে বলে মনে করেন এসব ব্যবসায়ী। সভায় দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে সময়মতো পণ্য আমদানিতে সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, অনেক সময় জোগান ঠিক রাখতে ডেফার্ড এলসিতে (লম্বা সময় নিয়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করা, যা সেই সময়ের ডলারের দামে নিষ্পত্তি হয়) পণ্য আনতে হয়। ঋণপত্র নিষ্পত্তি করার সময় ডলারের দাম বেড়ে গেলে তাদের অসুবিধায় হয় এবং অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। তবে এ ব্যাপারে বিইআরসি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বাড়লেই দেশে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাড়তি দামের সেই পণ্য তখনো দেশে প্রবেশ করেই না। আইনের বলে প্রতি মাসেই এলপিজির দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আইনেই বলা আছে নির্ধারিত দামের বেশি রাখলে সেটা অপরাধ, কারণ উৎপাদকের মূল্য ও খুচরা মূল্য বিবেচনায় এনে এলপিজির দাম বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরও বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়টিকে তিনি দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। কোম্পানি পর্যায় থেকেই এলপিজির দাম বেশি রাখা হচ্ছে—এ অভিযোগ করে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা সেটা আরও বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। দাম বেঁধে দিয়ে ও অভিযান চালিয়েও এটার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চিনির ক্ষেত্রেও এমনটি হতে দেখা গেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, পারস্পরিক দোষারোপ নয়, বরং সাধারণ মানুষকে কষ্ট না দিয়ে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। নিয়মিত তদারকির পরও নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করতে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবার সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৯৭ টাকা। এরপর জানুয়ারিতে দাম একটু কমলেও ফেব্রুয়ারিতে ২৬৬ টাকা দাম বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে ৯০ হাজারের মতো ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হয়ে থাকে।