জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানার আহ্বায়ক মাওলানা মুফাজ্জল ইবনে মাহফুজের পিতার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ জানয়ারী) বাদ আছর শহরের চাষাঢ়া এলাকায় এ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ফতুল্লা থানা শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়গঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ও প্রধান আলোচক হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, বাবা মানেইতো এক পাহাড়সম আস্থার জায়গা। প্রত্যেকের বাবা প্রত্যেকের জন্য এমন। আমার জীবন থেকে আস্তে আস্তে করে এ জায়গাগুলো খালি হতে লাগলো। আমার বাবা চলে গেছেন, এরপর আমার বড় যিনি আমাদের এলাকায় একজন গন্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। এরপর একজন মানুষের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন আমার একমাত্র ফুফা ইয়াত আলী মেম্বার সাহেব। জীবনভর আওয়ামী লীগ করেছেন। আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের যে কয়জন লোক পরিচিত তার মধ্যে ইয়াদ আলী মেম্বার ছিলেন একজন। তার রক্তে মাংসে সবখানে ছিলো আওয়ামী লীগ। অথচ আমি যখন দোয়া চাইতে গেলাম ওনার কাছে, সেই মহুর্ত্বে তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন ‘আমি আজ থেকে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলাম।’ সারা এলাকার মানুষ যুবক বৃদ্ধা সবাই তার কাছে বসে থাকতেন। সবাই এদিকে সেদিক সরছে কিন্তু তিনি ওখানেই পড়ে থাকতেন। ওনি যখন চলে গেলেন তখন আমি ওমরাহ্ করতে ছিলাম।
তিনি বলেন, একে একে সব চলে যাচ্ছেন। এখন আমাদের মধ্যে একিন হয়েছে যে, আমাদেরও চলে যেতে হবে। রাজনীতি ব্যবসা বাণিজ্য যেটাই করি না কেন এই জায়গাটাই আমাদের আসতেই হবে। এ শিক্ষাটা যদি গ্রহণ করি তাহলে শোকসভা-দোয়া মাহফিল এসবের স্বার্থকতা থাকবে। নয়তো, এসব শুধু করেই যাবো কিন্তু আমার জীবনে কোন পরিবর্তন আনতে পারবো না। এ জন্য আমরা এদেশে সংগঠন করবো, রাজনীতি করবো, হেফাজত, জমিয়াত করবো কিন্তু কোন জায়গাতে গিয়ে যেন আমরা একিন ছেড়ে না দেই। একে অপরের সাথে কোন কথা বার্তা বলতে গিয়েও যেন সাবধান হই। এ ধরনের চিন্তা করে যদি নিজের জীবন পরিচালনা করা যায়, তাহলে আমরা জান্নাতে যেতে পারবো।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, আমাদের সহযোদ্ধা যারা তাদের শোকে যদি একটু শরিক হতে না পারি, আমাদের সহযোদ্ধা যারা তাদের দু:খে যদি একটু সামিল হতে না পারি, আমাদের সহযোদ্ধা যারা তাদের সাথে যদি কাঁধে কাধ মিলাতে না পারি, আমি জাতির নেতৃত্ব দিতে পারবো না, আমি সমাজের কোন কাজে আসতে পারবো না। মুফতি কাসেম সাহেব কত কাজের মানুষ। তারপরও চলে আসছেন এখানে। কেন? শুধুমাত্র সাথীদের একটু কাতারে দাঁড়ানোর জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করবো নারায়ণগঞ্জের যে পরিবেশ, যে পরিস্থিতি আমরা চব্বিশঘন্টা নারায়ণগঞ্জের থাকি আমরা জানি। নারায়ণগঞ্জে কত রকমের পলিটিক্স হয়, নারায়ণগঞ্জে কত রকমের নোংরামি হয়, নারায়ণগঞ্জের কত রকমের খারাপি কাজ হয় এটা আমরা জানি। কিন্তু সারা বাংলাদেশের মানুষ নারায়ণগঞ্জকে দুইভাবে চিনে। একভাবে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ। এটা একটি ব্যবসায়ীক এলাকা, শিল্পকারখার এলাকা। দূরদুরান্ত থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে মানুষ কলকারখানা করতেছে। এভাবে গোটা দেশের মানুষ নারায়ণগঞ্জকে চিনে। আরেকটা পরিচয় আছে, খারাপের নারায়ণগঞ্জ। বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় যাই এ কথাগুলো আমাদের শুনতে হয় যে, নারায়ণগঞ্জ হলো একটা ভয়ংকর জায়গা। নারায়ণগঞ্জ একটা সন্ত্রাসীদের আস্তানা, নারায়ণগঞ্জ এটা খুনিদের আস্তানা। এ লজ্জা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আমরা এ গডফাদার শব্দ আর শুনতে চাই না। আমরা খুনি কিংবা নারায়ণগঞ্জের নামে কোন অপমান শুনতে চাই না। এ জিনিসগুলো থেকে আমরা বেড়িয়ে আসতে চাই। আগামীতে সুন্দর নারায়ণগঞ্জ দেখতে চাই। আগামী আপনারা আমার সন্তান কি পরিচয়ে বাঁচবে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করে গড়ে তোলতে হবে। এ জন্য ঐক্যবদ্ধাভাবে নারায়ণগঞ্জকে কিভাবে সাজাবো সেই পরিকল্পনা করতে হবে।
বক্তব্য শেষে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানার আহ্বায়ক মাওলানা মুফাজ্জল ইবনে মাহফুজের পিতাসহ সকল কবরবাসীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ফতুল্লা থানা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ মোহাম্মদ হানজালার সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে জেলা ও জেলার আওতাধীন সকল থানা এবং ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।