নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু’র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বুধবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে এলাকাবাসী।
হাজী মিছির আলী ডিগগ্রি কলেজ, সরকারী তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ, শেখ বোরহানুদ্দিন পোস্ট গ্রাজেয়েট কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজ, পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়, দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী পান্দে আলী উচ্চ বিদ্যালয়, দেলপাড়া ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, আহসান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কুতুবপুর ও ফতুল্লার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি কুচক্রী মহল গভীরভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি মামলায় চেয়ারম্যান সেন্টুকে জড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে জনগনের কল্যাণে কাজ করেছেন। কুতুবপুর ইউনিয়ন একসময় খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের অভয়ারান্য ছিলো। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে মনিরুল আলম সেন্টু দায়িত্ব নেয়ার মধ্য দিয়ে তার সাহসী নেতৃত্বেই শান্ত হয়েছে কুতুবপুর এবং ধ্বংস হয়েছে ত্রাসের রাজত্ব। সেই থেকে তিনি শান্তি প্রিয় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষের আস্থা, বিশ^াস ও ভালোবাসার ঠিকানা। তাই সাধারণ মানুষ মনে করেন, চেয়ারম্যান সেন্টুর নেতৃত্বেই কুতুবপুর সবচেয়ে নিরাপদ। এমন একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যানকে আমাদের কাছ থকে তথা কুতুবপুরবাসীর কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তিনটি মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। অবিলম্বে এই সকল মামলা থেকে আমরা সেন্টু চেয়ারম্যানের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, আমরা দেখেছি বিগত আওয়ামী শাসনামলে গায়েবী হামলা-মামলা হয়েছে, ব্যাপক বৈষম্য হয়েছে। সেই সকল হামলা-মামলা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা জয়ী হয়েছি। কিন্তু এখনো যদি আবার সেই গায়েবী মামলা দেয়া হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা তথা আমাদের সেই আন্দোলনের কি মূল্য রইলো? যারা এই গায়েবী মামলা দিয়ে সেন্টু চেয়ারম্যানসহ নিরপরাধী ব্যক্তিদেরকে হয়রানী করতে চায়, তারা মূলত এই অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়।
এর আগে, মানববন্ধনে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, মনিরুল আলম সেন্টু ২০০২ সাল থেকে এখন পযন্ত কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। ২০২১ সালে সর্বশেষ নির্বাচনে তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে জোরপূর্বকভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগে যোগদান করেননি তবে সেন্টুর পক্ষে নৌকার মনোনয়ন আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছেন শামীম ওসমান। সেন্টু চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সদস্য পদ না নিয়েও নৌকার মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করার পর থেকে একটি কুচক্রী মহল তার পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার পরেও কোনো দিন কোনো মিছিল মিটিংয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু না বলার কারণে তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের কাছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনেক বিচার নালিশ দিয়েছেন।
তারা বলেন, গত ১৯ জুলাই তারিখে ছাত্র আন্দোলনের মুখে যখন সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠে ঠিক ঐ মুহূর্তে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন সেন্টু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে বলে অভিযোগ তুলেন। পরবর্তীতে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হলে তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রদের পাশে গিয়ে দাড়ান। আন্দোলনে গিয়ে নিহত ও আহত ছাত্র-জনতার খোঁজ খবর নেন, নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া পুলিশ কর্ম বিরতিতে যাওয়ার পরে যেসকল শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন দেয়ালে আলপনা আর্টের কাজ করেন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং আর্ট করার জন্য রং কিনে দেন। সেন্টু চেয়ারম্যান যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত-নিহতদেও খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং কুতুবপুর তথা ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছেন ঠিক ঐ মুহূর্তে একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সেন্টুর নাম জড়ানো ঠিক হয়নি দাবি করে তারা বলেন, মামলায় সেন্টু চেয়ারম্যানের নাম জড়ানো ঠিক হয়নি তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো না তাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে জড়ানো হয়েছে।
মানববন্ধন কর্মসূচী শেষে মামলা থেকে সেন্টু চেয়ারম্যানের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা।