নিজস্ব প্রতিবেদক, ফতুল্লা
অপ্রাপ্ত বয়সের এক কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে জোর পূর্বক বিয়ে দেওয়ার ইস্যুতে ছাত্রলীগ নেতার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের উদীয়মান এই নেতার ক্লিন ইমেজকে নষ্ট করারা উদ্দেশ্যে ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মত একটি সুনাম ও ক্ষ্যাতি সম্পন্ন সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পরে লেগেছে একটি চক্র। এমনটাই দাবি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি টিপু সুলতানের।
খবরের পাতায় উঠে আসা খবরের সাথে ঘটনার ভেতরের ঘটনা অনুসন্ধানে গেলে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। কী ঘটেছিল সেইদিন? যে কারনে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে আসে গল্পের ভিতরের গল্প। ভুক্তভোগী কিশোরীর জবানবন্দী ও স্থানীয়দের বক্তব্যে সচ্ছতার সাথে জানা গেছে প্রকৃত ঘটনা। কী ঘটেছিল সেই দিন? ঘটনার সুত্রপাত হয় ১৪ বছরের এক কিশোরীকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে জোর পূর্র্বক বিয়ে করানোর মধ্য দিয়ে। অপহরণের বেশি কিছুদিন পর ভূক্তভোগী কিশোরীর বাবা তার সন্ধান পায়। সেই বাড়িতে হাজির হয়ে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে আসতে চাইলে সরাসরি বাধা প্রদান করে অপহরণকারী ইব্রাহীম ও তার মা দুলালী বেগম। বহু চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়েকে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় গন্যমান্যদের নিয়ে সামাজিকভাবে লামপাড়ার হানিফ আহমেদের বাড়ির ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অপহরণকারী ছেলে ইব্রাহীম ও তার মা দুলালী বেগমকে নিয়ে সামাজিকভাবে শালিসে বসেন। বেড়িয়ে আসে দুলালী ও তার ছেলের নানা অপকর্মের কথা। এক পর্যায়ে এই বিষয়ে আইনীভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হন উপস্থিত গন্যমান্য ব্যক্তিরা। শালিসে উপস্থিতদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা তাদের দেখানো সকল কাগজপত্র দেখে মেয়ের বাবাকে বলেন, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, ধর্ষণ সহ জাল কাগজ তৈরী করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করতে।
সেদিনের পর যা হয়েছে…
শালিসে দেওয়া সিদ্ধান্তে ফেঁসে গেছেন দুলালী ও তার ছেলে। কারণ ভূক্তভোগী কিশোরীর জবানবন্দী ও জাল কাগজ তৈরী করে বিয়েতে ছেলে ইব্রাহীমের হয়ে সাক্ষী হয়েছেন তার মা দুলালী বেগম। বিষয়টি বুঝতে পেরে শুরু হয় মিমাংশার দৌড়ঝাপ। দুলালী বেগম ধর্ণা দিতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা টিপু সুলতানের ব্যক্তিগত অফিসে। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য প্রথমে অনুরোধ করা হয়। পরে এই বিষয়ে টাকার বিণিময়ে সমাধান চাইলে রেগে যান ছাত্রলীগ নেতা টিপু সুলতান। তাকে তার অফিস থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। এতেই দুলালী বুঝে যান এখানে অনৈতিক প্রস্তাব কাজে আসবে না। তখন তিনি নিজে থেকেই কিংবা তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে নিজেকে বাঁচাতে কিংবা তাকে অনৈতিকভাবে সমর্থন না করার কারনে সেই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
ঘটনার তদন্তে সরেজমিনে গেলে ইব্রাহীমের ৪র্থ স্ত্রীর সন্ধান মিলে। লম্পট ইব্রাহীমের ৪র্থ স্ত্রী জাহানার জানান, ৪ বছরের সংসারের কোন খরচই দেয়না তার লম্পট স্বামী। তাদের ঘরে ১৩ মাসের একটি সন্তানও রয়েছে। সন্তান এবং স্ত্রীর সকল অধিকার থেকে তিনি বঞ্চিত। নিজের অধিকার চাইতে যেয়ে বহুবার স্বামী ও তার শ^াশুরী দুলালীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। স্বামীর সংসারে নির্যাতনের কথা বলতে যেয়ে অশ্রুসিক্ত হন তিনি।
অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার ভূক্তভোগী কিশোরীর সাথে আলাপ হলে তিনি নারায়ণগঞ্জের আলোকে জানান, আমাকে প্রায় সময় রাস্তায় উত্যাক্ত ও কুপ্রস্তাব দিত ইব্রাহীম। আমি তাতে সাড়া না দেওয়ায় সে আমাকে তার আরো বেশ কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করেন। এসময় আমাকে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। আমি জানতে পারি তার আগে আরো ৪ বউ ছিল এবং সেখানে তার বাচ্চাও আছে। আমার জীবনটাকে নষ্ট করেছে সে। আমি ইব্রাহীম ও তার প্রশ্যয়দাতা মায়ের উপযুক্ত বিচার চাই। তার জবানবন্দীর ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে।
এই বিষয়ে ভূক্তভোগী কিশোরীর বাবা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ের জন্ম ২০০৯ সালে। ইব্রাহীম তার এক প্রভাবশালী সহযোগীর মাধ্যমে আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে সর্বনাশ করে। আমি তার ও তার মায়ের বিচার চাই। এছাড়া এই বিষয়ে আমাকে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কারনে ছাত্রলীগ নেতা টিপু সুলতানের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হযরানীর প্রতিবাদ করি। তিনি মানবিকতা থেকে আমাকে সাহায্যের জন্য ইগয়ে এসেছেন। অথচা তাকেই মিথ্যা অভিযোগ এন হয়রানি করা হয়েছে। আমি এই অপরাধী নারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এই বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা টিপু সলতানের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, ঘটনা পানির মত পরিস্কার। অথচ এখানা পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে একমাত্র প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও আমার ইমেজ নষ্ট করতে। বিয়ের কোর্ট ম্যারেজের কাগজ ও জন্মনিবন্ধন সহ সব কিছুই বলে দিচ্ছে এখানে জোরপূর্বক বাল্য বিযে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অপহরণ ও ধর্ষণেরও অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে গিয়েছিলাম মানবিকতার স্বার্থে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন বল্য বিয়ে রোধ করতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও জননেতা শামীম ওসমানের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে মনে করি রাজনীতি যেহেতি করি, তাই অসহায় মানুষদের পাশে থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব। সে যায়গা থেকেই সেখানে গন্যমান্য মুরুব্বিদের নিয়ে বসে ছিলাম। নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। অথচ আমাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে।
তবে এত অপকর্মের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই হোতা দুলালী বেগমকে তার বাড়িতে যেয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সন্ধান মিলেনি বিধায় তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।