পেসারদের তোপে ভারতের ভালো পুঁজি পাওয়ার আশা শেষ করে দিল পাকিস্তান। ধস নামিয়ে শেষ ৩০ রানে ৭ উইকেট তুলে গুটিয়ে দিল রোহিত শর্মাদের। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের অল্পতে বেঁধে ফেলার ফায়দা লক্ষ্য তাড়ায় নিতে পারল না বাবর আজমের দল। ভারতের পেসাররাও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে ফেললেন আরও আগে।
রোববার নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের বৈচিত্র্যময় উইকেটে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে লো স্কোরিং দ্বৈরথে ৬ রানে জিতেছে ভারত। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে স্রেফ ১১৯ রানে অলআউট হয় তারা। জবাবে পুরো ওভার খেলে পাকিস্তান করতে পারে ৭ উইকেটে ১১৩ রান। টানা দুই হারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের জোরালো শঙ্কায় পড়েছে তারা।
বৃষ্টিবিঘ্নিত হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে বল হাতে ভারতের জয়ের নায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। ২ উইকেট নিতে হার্দিক পান্ডিয়ার খরচা ২৪ রান। উইকেট না পেলেও মোহাম্মদ সিরাজ ৪ ওভারে দেননি ১৯ রানের বেশি।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম দুই ওভারে ১৫ রান আনেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। বাবরের ব্যাট থেকে আসে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে সিরাজকে মিড অন দিয়ে চার মারেন তিনি।
পরের দুই ওভারে অবশ্য ফিরতে পারতেন দুই ওপেনারই। কিন্তু কপাল মন্দ ভারতের। তারা সুযোগগুলো লুফে নিতে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় ওভারে আক্রমণে আসা পেসার বুমরাহর চতুর্থ ডেলিভারিতে ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ তোলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে তা ফেলে দেন শিবাম দুবে। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বাবরের ব্যাট থেকে দ্রুত ছুটে আসা ফিরতি ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি সিরাজ।
বেশিক্ষণ অবশ্য আক্ষেপে পুড়তে হয়নি বুমরাহকে। বাবর কাজে লাগাতে পারেননি ব্যক্তিগত ৯ রানের সময় পাওয়া দ্বিতীয় জীবন। আক্রমণে ফিরে চার হজমের পরের বলেই তাকে ছাঁটেন বুমরাহ। লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে স্লিপে দুর্দান্ত নিচু ক্যাচ নেন সূর্যকুমার যাদব। ১০ বলে ১৩ রানে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।
২৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান পাওয়ার প্লে শেষ করে ৩৫ রান তুলে। ওই ওভারে ইনিংসের প্রথম ছক্কা আসে শান্ত থাকা রিজওয়ানের ব্যাট থেকে। এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে বল সীমানাছাড়া করে খোলস ভাঙার ইঙ্গিত দেন তিনি।
তিনে নামা উসমান খানকে ক্রিজে কখনোই স্বস্তিতে দেখা যায়নি। ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে ভুগছিলেন তিনি। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৫৭ রান ওঠার পর পাকিস্তানের ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগের শুরুতেই তার দুর্দশার ইতি টানেন অক্ষর প্যাটেল। পেছনের পায়ে খেলতে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। আম্পায়ার শুরুতে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় ভারত।একবার রানআউট থেকে বেঁচে যাওয়া উসমান থামেন ১৫ বলে ১৩ রান করে। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৩ বলে ৩১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। রিজওয়ান ধুঁকতে থাকলেও ওই ওভারেই ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মেরে ইতিবাচক রূপে হাজির হন ফখর জামান। কিন্তু আরেকটি আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। হার্দিকের বাউন্সার পুল করার চেষ্টায় উইকেটরক্ষণ রিশব পান্তের দারুণ ক্যাচে থামেন তিনি।
বাবর ও উসমানের মতো থিতু হতে না পারা ফখরের ব্যাট থেকেও আসে ঠিক ১৩ রান। তিনি মোকাবিলা করেন ৮ বল। ৭৩ রানে পাকিস্তান হারায় তৃতীয় উইকেট। আর মাত্র ৭ রান যোগ হতেই থামেন রিজওয়ান। ১৫তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই বুমরাহ বোল্ড করেন তাকে।
কিছুটা নিচু হওয়া বলের লেংথ পড়তে ভুল করেন রিজওয়ান। বড় শট খেলতে গিয়ে হারান স্টাম্প। ক্রিজে সংগ্রাম করতে থাকা রিজওয়ানের বিদায় ঘটে ৩১ রানে। ৪৪ বল খেলে মাত্র একটি করে চার ও ছক্কা মারেন তিনি।
সুযোগ লুফে নিয়ে চাপ বাড়াতে থাকে ভারত। শাদাব খান ও ইমাদ ওয়াসিমের জন্য রান বের করার পথ কঠিন করে তোলেন হার্দিক, বুমরাহ, পান্ডিয়ারা। এতে পাকিস্তানের জন্য ৪৮ বলে ৪৮ রানের সহজ সমীকরণ এক পর্যায়ে কঠিন হয়ে চাহিদা দাঁড়ায় ২৪ বলে ৩৫ রানের। চাপ আলগা করার প্রয়াসে আউট হন শাদাব। টপ এজে পান্তের তালুবন্দি হয়ে হার্দিকের দ্বিতীয় শিকার হন ৭ বলে ৪ করা শাদাব।
২৬ বলে ১৫ রান যোগ করতে ৩ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় পাকিস্তান। ইমাদ ও ইফতিখার আহমেদ পারেননি সেই ধাক্কা সামল দিয়ে দলকে পথে ফেরাতে। বুমরাহর শেষ বলে ইফতিখার ক্যাচ দেন আর্শদীপ সিংকে। তার সংগ্রহ ছিল ৯ বলে ৫ রান।
শেষ ওভারে পাকিস্তানের চাহিদা দাঁড়ায় ১৮ রানের। ভীষণ ধুঁকতে থাকা ইমাদ প্রথম বলেই আর্শদীপের শিকার হন। ২৩ বল খেলে একটি চারের সাহায্যে মাত্র ১৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর নাসিম শাহ চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দুটি চার মারলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। নাসিম অপরাজিত থেকে যান ৪ বলে ১০ রানে।
এর আগে বৃষ্টিবিঘ্নিত ইনিংসে ভারতের মাত্র তিনজন ব্যাটার যেতে পারেন দুই অঙ্কে। তিনে নামা পান্ত আউট হন ৩১ বলে ৬ চারে গড়া সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ২৯ রানে ১ উইকেটে চার ওভারের স্পেল শেষ করেন শাহিন। নাসিম চার ও হারিস রউফ তিন ওভারে করে সমান ২১ রান দিয়ে পান তিনটি করে উইকেট। আমিরের ঝুলিতেও ২৩ রান খরচায় ঢোকে দুটি উইকেট।
দুই ম্যাচে দুই জয়ে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকা সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের পয়েন্টও সমান। তিনে থাকা কানাডার অর্জন ২ পয়েন্ট। যথাক্রমে চারে ও পাঁচে থাকা গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের নামের পাশে কোনো পয়েন্ট নেই।