দেশে যখনই সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, ঠিক তখনি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের পন্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রচুর অর্থ আদায়ে মেতে উঠে। করোনাকালিন সময়ে এক শ্রেণীর ঔষুধ ব্যবসায়ীরা যেমনি করে তাদের ঔষুদের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ে মেতে উঠেছিলো, ডেঙ্গুকে কেন্দ্র করে তারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মানবিক বিষয়গুলো যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ডেঙ্গু রোগীদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য যে ডিএনএস স্যালাইনের স্বাভাবিক মূল্য দেড়শ টাকা, তা কোন কোন ঔষুধ বিক্রেতা তার দশ-বারোগুন বেশি দামও রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ স্যালাইন যেন ওই ঔষুধ বিক্রেতাদের কাছে সোনার হরিণে পরিনত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শহরের নন্দীপাড়া এলাকার মাহবুব মেডিসিন কর্নারে ক্রেতাদের কাছ থেকে একটি ক্লোরাইড স্যালাইনের মূল্য রাখা হচ্ছে ১২শ টাকা। অথচ এ স্যালাইনের দাম বাজারে সর্বোচ্চ দেড়শ টাকা। রোববার (২১ অক্টোবর) রাতে এক জরুরী রোগীর জন্য ওই ঔষুধের দোকানে যান এক ক্রেতা। তিনি এ স্যালাইনের দাম শুনেই হতাশ হয়ে যান। কিন্তু স্যালাইনটা জরুরী হওয়ায় বাধ্য হয়েই দেড়শ টাকার স্যালাইন ১২শ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু ঔষুধ নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে আরও একটি ঔষুধের দোকানে গেলে সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এ স্যালাইনের
দাম মাত্র ১৫০ টাকা।
পরে এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এলাকার অনেক মানুষ এসে জড়ো হয়। উত্তেজনার এক পর্যায়ে অনেকটা চাপের মুখে স্যালাইনের দাম ১৫০ টাকা রেখে বাকী টাকা ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেয় ঔষুধ দোকানী। এসময় ওই অসাধু ঔষুধ বিক্রেতাকে সাবধান করে দেন এলাকাবাসী। তারা ঔষুধ ব্যবসায়ীকে বলেন, আর যদি কখনো এমন অপকর্মে লিপ্ত হবেন তাহলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ডেকে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসাী। তারা বলছেন, বিপদে যারা ঔষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, তারা মানুষ না, পশু। তাদের কাছে মানবিকতা বলতে কিছু নেই। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জরুরী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। নন্দীপাড়ায় মাহবুবু মেডিসিন কর্নারের মত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অলি-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু অসাধু ও লোভী ঔষুধ ব্যবসায়ীদের দোকান। তারা পরিস্থিতি সংকটময় দেখলেই নিজেদের ইচ্ছেমত ঔষুধের দাম বাড়িয়ে দেয়। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র, হতদরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত মানুষগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে চলে যাবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ, দেশের পরিস্থিতি বেশি একটা ভালো না। মানুষের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে যদি ওই সমস্ত অসাধু ও লোভী ব্যবসায়ীরা ঔষুধপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে ঔষুধ কিনে রোগীর চিকিৎসা করানোর মত পরিস্থিতি থাকবেনা। তাই তাদের বিরুদ্ধে এখনই প্রশাসনের জরুরী অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।