জরুরি দরকারে বাড়ি যাবো, গ্রামে আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে লইয়া গেছে। লঞ্চ ঘাটে এসে শুনলাম, লঞ্চ চলব না। লঞ্চে গেলে আমার বাড়ি পৌছাতে লাগে দুই ঘন্টা। বাসে লাগে লঞ্চের দ্বিগুণ। এমনে হঠাৎ করে লঞ্চ বন্ধ করে আমাগো মতো মানুষের কষ্ট বাড়ায়। এই কথা বলেই নারায়ণগঞ্জ শহরের বাস টার্মিনালের দিকে ছুটে যায় নজরুল ইসলাম। সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে এসে নজরুল ইসলামের মতো ফিরে যায় শত শত যাত্রীরা। সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও চলছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। ফলে শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে শত শত যাত্রী সাধারণ। এদিকে নিজেদের দুর্ভোগ লাগবে ধর্মঘট করছেন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ ঘাটের নৌ শ্রমিকেরা। আস সালাহ লঞ্চের কর্মচারী বলেন, উপরের মানুষ (নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন) যা যা দাবি করছে , ওইগুলা মানলেই লঞ্চ চালু হইবো। নয়তো লঞ্চ চলত না। আমার বেতন গার্মেন্টসের কর্মীর চেয়েও কম। কিন্তু আমরা কি কম খাটি নাকি! জিনিস পত্রের নাম হু হু কইরা বাড়তাছে। কিন্তু আমাগো বেতন বাড়ে না। এই কর্মচারীর নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নাম কইয়া চাকরি খোয়ামু (হারানো) নাকি! সরেজমিনে লঞ্চ ঘাট ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি করে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে লঞ্চগুলো। যাত্রীরা ঘাটে এসে গন্তব্যের পথ পরিবর্তন করে নিরাশ হয়ে ফিরে যান। তবে সকলের দাবি, নৌযান বন্ধের বিষয়ে পূর্বে নোটিশ করা প্রয়োজন ছিল। এদিকে লঞ্চ বন্ধের কারণে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা লঞ্চ টার্মিনালের পাশেই ব্যবসায়ের মালামাল নিয়ে দাড়িয়ে আছেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী রাসেল শিকদার। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গাড়ি দিয়া আইছি, ট্রলার দিয়া মালামাল উঠাইয়া যামুগা। লঞ্চে যাতায়াতে খরচ কম হয়, মাল আনতে নিতেও খরচ অনেক কম। কিন্তু ট্রলারে খরচ বেশি হয়। লঞ্চ চলে না শুইনা, ভাড়া আরো বেশি নিতাছে। কিন্তু জিনিস কিনতে খরচ বেশি হইলেও মানুষ তো বেশি দামে কিনব না।
লঞ্চ ঘাটে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, বোনের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামে যাচ্ছিলাম দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। লঞ্চ চলবে না জানলে যাওয়ার অন্য ব্যবস্থা করতাম। অনুষ্ঠান উপলক্ষে এতো ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরে আবার বের হওয়া অনেক কষ্টের। বাসের পথ আমি চিনি না, আর আমাকে নেওয়ার মতো মানুষ এখন নেই।
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল এ বিষয়ে বলেন, লঞ্চ ব্যবসায়ে আমাদের লাভ হয় না বললেই চলে। লঞ্চ চলে ঠিকই কিন্তু লাভ হয় না আগের মতো। এরমধ্যে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হলে আমাদের অনেকের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হতে পারে। প্রসঙ্গত: দেশব্যাপী নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশনায় নৌযান শ্রমিকদের ১০ দফা দাবীতে ধর্মঘট চলছে। এই ধর্মঘটের সমর্থন করে রোববার থেকে নারায়ণগঞ্জে সকল প্রকার নৌযান শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালেও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সাধারণ নৌ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে, নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়াসহ ভারতীয় সীমানায় সব প্রকার হয়রানি বন্ধ, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ শতাংশ কার্যকর করে সব লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।