নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তির অপর নাম হকার। এখানকার হকাররা প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাতগুলো দখলে রাখে। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তাও দখলে নেয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন শহরবাসী। কোনোভাবেই যেন এই হকারদের দমানো যাচ্ছে না।
নগরবাসী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবাই ফুটপাত হকারমুক্ত করার পক্ষে থাকলেও শেষপর্যন্ত বিষয়টির আর সমাধান হচ্ছে না। হকারমুক্ত করতে গিয়ে সাবেক মেয়য় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যাচেষ্টার মতো লঙ্কাকাণ্ড ঘটালেও কোনোভাবেই কিছু হচ্ছে না। ফলে সড়কে যানজট ও চলাচলে ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
জানা যায়, সবশেষ চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে যানজট ও হকার ইস্যুতে বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকও।
এ সভায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত দখল নিয়ে হকারদের প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়। একপর্যায়ে সভায় উপস্থিত সবাই ফুটপাতে হকার না বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছে। সেই সঙ্গে হকারদের বসার বিষয়ে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তাদের এই একমত হওয়ার পরদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই আবার ফুটপাতে বসতে শুরু করেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হকাররা যেন লাগামছাড়া হয়ে পড়েছেন। পুরো সড়কই দখল করে রাখছেন। এতে করে নগরবাসী অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, হকার নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরই মধ্যে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি শহরের ফুটপাত মুক্ত করার। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে সুফল ভোগ করবে শহরবাসী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৫টি অভিযান পরিচালনা করেছি। তারপরও হকারদের শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। এখন আমরা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীসহ সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে একটা শৃঙ্খলায় ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। চেষ্টা করছি জনসাধারণকে এই বিষয়ে সম্পৃক্ত করার জন্য। এরই মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে হকারদের একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাবে।