সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়ে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন,‘আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আদালতের নির্দেশনা অনুুযায়ী মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ গতকাল বুধবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
কোটার বিরোধিতায় আন্দোলনের মধ্যে এ দিন সব পক্ষকে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে। এছাড়া আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সম্প্রতি এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে ফের নতুন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবারও সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি পালন করে।
কোটা ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সর্বোচ্চ আদালত। জানা গেছে আগস্ট মাসে চূড়ান্ত শুনানিতে শিক্ষার্থীদের দাবি সুবিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। আদালত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে বলেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব ফিরে যেতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা আদালতের নির্দেশ মেনে ফিরে গেল কি না তা পর্যবেক্ষণ করে দেখি। না ফিরে গেলে কি করা হবে এখনই এসব বলা সমীচীন হবে না।’
সরকার কোটা সংস্কার বিষয়ে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকবে জানিয়ে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে, আমরা তো সেই কোটামুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরছি না। আদালতের সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত। আশা করি, বাস্তবসম্মত রায় দিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’ সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যাপারটা আমাদের যোগোযোগ আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। অচিরেই সমস্যা সমাধান হবে।’
এ সময় চীন সফর শেষে এক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা নিয়ে ‘ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব কর্মসূচি সম্পূর্ণ হয়েছে। বেইজিং তিনি রাত্রীযাপনের কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানে না থেকে রাতেই দেশে ফিরে আসবেন।’ এর কারণ জানতে চাইলে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘সায়েমা ওয়াজেদ (প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে) দেশে আছেন। তিনি কিছুটা অসুস্থ। তাই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) রাতেই দেশে ফিরে আসছেন।’ কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবউদ্দিন ফরাজী।