নোটিসে বলা হয়, উৎপাদনের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক নগরীতে ক্রোনী গ্রুপের ‘অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড’ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান, এ এইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন এ কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন শাখায় অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করে। বৃহস্পতিবার বিকালে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ডিসেম্বর মাসের আংশিক ও জানুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেন কারখানার শ্রমিকরা।
কারখানা বন্ধের নোটিসে বলা হয়, “গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বে-আইনীভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কর্মবিরতি পালন করছে। কর্তৃপক্ষ বার বার তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কর্মবিরতি পালন করে।
“শ্রমিকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বে-আইনী ধর্মঘটের শামিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানার সকল শাখা/বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। উৎপাদনের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক ও নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নোটিসের মাধ্যমে অতি দ্রুত কারখানা চালু করার তারিখ জানানো হবে।”
বৃহস্পতিবার বিক্ষোভরত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে বাধা দিতে বহিরাগত লোকজন কারখানায় ঢোকে। পরে শ্রমিকদের রোষের মুখে তারা কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় কারখানার ভেতরের একটি স্থান থেকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা উদ্ধার করা হয়।
শ্রমিকদের দমন করতে এসব রাতেই কারখানার ভেতর ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। পরে এই অস্ত্র ও লাঠিসোটা জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
কারখানা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে সুইং শাখার এক শ্রমিক বলেন, “আমরা কারখানার ভেতর কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি। দুইদিন ধরে বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছি।
“কিন্তু মালিক কারখানা বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সমস্যায় ফেলে দিছে। কারখানা কবে খুলবে তাও কিছু বলে নাই।”
ডাইং শাখার আরেক শ্রমিক গণমাধ্যমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের সময় সোমবার বকেয়া বেতন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। বেতন যেহেতু মোবাইল নম্বরে ঢোকে তাই সোমবার পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো।
“বেতন পেলে কাজে যোগ দেবো। না পেলে আমরা আন্দোলনে নামবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এ ব্যাপারে জানতে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এইচ আসলাম সানির মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেন নাই।
শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, “কারখানাটি বন্ধ নিয়ে কোনো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সে ব্যাপারে শিল্প পুলিশ কাজ করছে। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে আমরা জেনেছি।”
এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর অর্ডার কমে যাওয়ার কথা বলে ক্রোনী গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়।
প্রতিবাদে পরদিন সকালে কারখানাটির কয়েকশ শ্রমিক ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেন।