সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে মন্তব্য করে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখতে সব রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনের শহীদ এবং হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গুম-খুন-অপহরণ-জেল-জুলুম-হামলা-মামলা-ভয় কোনোকিছুই তাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে বিচ্যুত রাখতে পারেনি।’
গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পরপর তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সামনে আমি আবারও একটি প্রত্যয় ব্যক্ত করতে চাই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভোলেনি, ২০২৪ সালে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদেরকেও বাংলাদেশ কখনোই ভুলবে না।’
জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ইচ্ছে আমাদের আছে,’ বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীবিরোধী এই আন্দোলনে অসংখ্য মানুষ শহীদ হয়েছেন, গুম-খুন-অপরহণ-নির্যাতনের-নিপীড়নের-হামলার শিকার হয়েছেন। শুধু জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেই বিএনপির কমপক্ষে ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন।’
আমাদের প্রশ্ন মানুষ কি এভাবেই জীবন দিতে থাকবে। এই মানুষগুলো কানাডার বেগমপাড়ায় অথবা মালয়েশিয়ায় হোম কিংবা সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার দাবিতে আন্দোলন করেনি। তাদের দাবি ছিল রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা,’ বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে জনগণের সামনে একটি আধুনিক প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অবশ্যই আমাদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আর ভুল করা চলবে না। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে লাখো শহীদের কাঙ্ক্ষিত ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী দিনে আর কোনো অপশক্তি যেন বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, সংবিধান লঙ্ঘনকারী পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে আর কেউ যেন অপতৎপরতা চালাতে না পারে—এসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে।’
জনগণের নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে, নির্ধারিত মেয়াদের পর সেই সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও জনগণের হাতে থাকবে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে এভাবে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া গেলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,’ বলেন তিনি।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন’ উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সংখ্যানুপতিক নির্বাচন ব্যবস্থার বিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং ভৌগোলিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য এই ব্যবস্থাটি কতটুকু উপযোগী অথবা উপযোগী কিনা, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে আমি সবার প্রতি অনুরোধ রাখব।’
তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার আড়ালে পুনরায় দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অজান্তেই পতিত পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্ট অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, এই বিষয়টিও আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার,’ বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি নিত্য নতুন ইস্যু যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জনগণের প্রতিদিনের সমস্যা সমাধান লাঘব করা সম্ভব নয়। জনগণের সমস্যা সম্ভাবনার কথা তাদের কাছে পৌঁছানোরও তেমন কোনো মাধ্যম নেই। সুতরাং সংস্কারের ইস্যু নিয়ে আমরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যস্ত রাখি, তাহলে হয়তো বা সেটি জনগণকে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন ইচ্ছামতো শর্তের তালিকা না বাড়িয়ে শহীদদের চেতনায় বাংলাদেশকে উপলব্ধি করি…প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হোক আলোর প্রতিযোগিতা, শুরু হোক ভালোর প্রতিযোগিতা। ফ্যাসিবাদদের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের আলোয় ফিরুক বাংলাদেশ।’