সোহান ॥ আতঙ্কিত এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ছিল রমজান মাস। এদিন রূপালী নিজ ওয়ার্কশপে মেরাজুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর বন্ধু আল আমিনকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন প্রাণে বেঁচে যায় আল আমিন। হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পিংকির নাম সহ দায়ের করা মামলা করে বেশ চাপে ছিলেন নিহত ভূক্তভোগী এক নারী। এর মধ্যে মেরাজ হত্যা মামলার আসামি এবং তাদের পরিবার ও সহযোগীদের দ্বারা হুমকি সহ নানা নির্যাতনের শিকার হন। ভেবেছিলেন আওয়ামীলীগ সরকারের পতনে নতুন বাংলাদেশে এবার অন্তত বিচার পাবেন, আসামিরা পাবেন শাস্তি। তবে, সেটি এখনো হয়নি, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই এলাকায় ফিরে আসে। আসামিরাই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। দেখা গেছে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ্র মিটিং মিছিলে। এছাড়াও থানার ভিতরেও সাবেক তদন্ত ওসি আবু বকর সিদ্দিকের অফিস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন হত্যা মামলার আসামি পিংকি। এমনকি আসামিদের প্রাণনাশের হুুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভূক্তভোগী ওই নারী।
স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মেরাজ হত্যা মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। বিশেষ করে পিংকি এখন বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ্র সহযোগী। ৫ আগস্টে এলাকায় প্রকাশ্যে এসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। হামলা করেন হাফেজীবাগ এলাকায়, প্রায় ১১টি বসতবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট করে। একের পর এক অপকর্ম করলেও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে, থামেনি তার অপকর্ম। তার বাহিনীর হাতে খুন হন ছালেনগর এলাকার সোহান নামে এক যুবক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রবিবার রাতে হামজুর ছেলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় পিংকি ও বিএনপির নেতা কাজল বাহিনীর সঙ্গে। এর জেরে রূপালী বাগান এলাকায় প্রকাশ্যে চাকু দিয়ে বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় সোহান নামে এক যুবককে। মূলত: হত্যা মামলার আসামি পিংকি ও বিএনপির নেতা কাজল একই গ্রুপের। তাদের নেতৃত্বে রূপালী, ছালেনগর এলাকায় কিশোর গ্যাং দিয়ে সা¤্রজ্য তৈরি করেছে। ড্রেজার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সোহানকে হত্যা করা হয়। তবে পিংকি ও কাজল একই গ্রুপে থাকলেও সোহান হত্যার পর একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোরও চেষ্টা চলছে। এছাড়াও এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ। এই হত্যা মামলা থেকে পিংকিকে বাঁচাতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে শাহেন শাহ এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। যা নতুন করে জন্ম নিয়েছে আলোচনা।
একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপির নেতা কাজল, তিনি শাহেন শাহ্র লোক হলেও গোপনে কাজ করেন সাবেক যুবদলের সভাপতি আমির হোসেনের। রূপালী এলাকায় আমির হোসেন এর সঙ্গে নানা কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন কাজল। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে রূপালী এলাকায় পিংকি একটি গোপন মিটিং করেন। ওই মিটিং এ নিজেরে মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা হয় এবং রবিবার পরিকল্পিতভাবে সোহানকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে তারা। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় কাজলের উপর দায় চাপিয়ে পিংকিকে মামলায় যেনো না জড়ায় চলছে জোরালো তদবির।
এদিকে, নিহত সোহানের পিতা জানান, পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে তার ছেলেকে বিএনপির নেতা কাজল বাহিনী হত্যা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কাজলের নাম প্রকাশ্যে বললেও ভয়ে হত্যা মামলার আসামি পিংকির নাম বলতে নারাজ নিহতের পিতা সালাম মিয়া।
অপর দিকে, সকাল থেকেই হত্যা মামলার আসামি পিংকি তাঁর দলবল নিয়ে ছালেনগর নতুন মসজিদের সামনে অবস্থান করছে। এর পাশেই নিহত মেরাজ এর পরিবার বসবাস করতেন। তারাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।