সরকারি বা সায়িত্বশাসিত সব দপ্তর-অধিদপ্তর নিয়োজিত আউটসোর্সিং বা দৈনিক মজুরিভিত্তিক এবং প্রকল্পে কর্মরত সবাইকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে বয়স শিথিল করে জাতীয়করণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ।
বুধবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দাবি জানানো হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে আউটসোর্সিং কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা তাদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরে বলেন আউটসোর্সিং ভুক্তভোগীরা, তারা বলেন ঠিকাদার কতৃক সন্ত্রাসী হামলা থেকে শুরু করে নিয়োগ বানিজ্য ও জটিলতা কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় করে থাকে আর এমন কোন অনিয়ম নেই যে তার করে না, এরই মধ্যে টেন্ডার জটিলতায় কর্মরত অনেকের চাকরি চলে যায়, বছর শেষে জুন মাসে রিনিউ করার নামে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন, ঘুষ না দিলে চাকরি চলে যায়। প্রতি মাসে বেতন পায় না, কখনও কখনও ৫/৬ মাস, ১/২ বছরও বেতন বকেয়া থাকে। কোনও অপরাধ ছাড়াই বিনা কারণে কথায় কথায় চাকরিচ্যুত করা হয় দক্ষ কর্মচারীদের। প্রশাসনিক জটিলতায় কাজ করেও অনেকে বেতন ভাতাদী থেকে বঞ্চিত হয়।
তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি দফতর, অধিদফতর, পরিদফতরে ইতোমধ্যে অনেকেরই
বিনা অপরাধে এবং ঠিকাদারকে ঘুষ না দিতে পারায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অনেকেই। আমরা চাকরিচ্যুতদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, জেলা-উপজেলায় ঠিকাদারের হাত থেকে আমাদের বেতন নিতে হচ্ছে। তারা আমাদের সরকার নির্ধারিত বেতন না দিয়ে মনগড়া বেতন দিয়ে থাকে এবং বেতন দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট তারিখও থাকে না। আবার নির্ধারিত কর্মঘণ্টা কাজ করার পরও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ করতে হয়। বিনিময়ে আমরা কোনও পারিশ্রমিক পাই না।
এসময় বৈঠকে তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আপনাদের ক্ষেত্রে যে অধিকারের বৈষম্য ঘটছে এটা চলতে পারে না। আপনাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে আর কাউকেই যেন চাকরিচুত করা না হয় সে দিকে খেয়াল রখতে হবে।
তিনি আরো বলেন মধ্যভুগী
ঠিকাদার কি দরকার যেহেতু বেতন সরকার দিচ্ছে ও দীর্ঘ সময়ে তারা দক্ষতা অর্জন করেছে, কাজেই এই মধ্যভোগী ঠিকাদার বাদ দিয়ে দেন, এদের কোনও প্রয়োজনীয়তা নাই। আপনাদের পরিশ্রমের টাকা তাদের পকেটে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নাই।
এক দেশে দুই নীতি চলবে না— মন্তব্য করে তিনি বলেন, লোক নিয়োগের একটা সরকারি প্রক্রিয়া আছে, সেটা আপনারা চালু করেন। কিন্তু আউটসোর্সিংয়ের নামে সব অধিকার কাটিং করে কতিপয় ঠিকাদার এখানে মানুষ নিয়ে ব্যবসা করবে এটা আর চলতে দেওয়া যাবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সেখানে অধিকারের সমতা, সুযোগের সমতা হচ্ছে প্রধান বিষয়। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে বলতে চাই, আপনারা বলেছেন তাদের দাবি মেনে নেবেন। এটা মানুষের ন্যায্য দাবি, এটা মানার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। না হলে আমরা একসাথে আপনাদের (আউটসোর্সিং কর্মচারী) সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় রাজপথে নামবো।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাসুদ কামাল বলেন, যারা এ ধরনের নিয়ম বানিয়েছে তারা ঘৃণিত। তারা মানুষের কাতারেই পড়ে না। জুলাই-আগস্টে আমরা আন্দোলন করেছি অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আমরা শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করিনি।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা এগুলো সমাধান করেন। দেয়ালে ওদের পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আবার আন্দোলন করবে রজপথে নামবে।
আর একজন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আশরাফ কায়সার বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। আপনাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটতেই হবে। আপনাদের অধিকার আদায়ের দাবি যৌক্তিক। আমরা দাস প্রথার বিলুপ্তি চাই।
বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আজিমের ও সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেনও উপস্থিত ছিলেন, আউটসোর্সিং দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম.এম জীবনের সঞ্চালনায় এসময় সারা বাংলাদেশের আউটসোর্সিং নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা জানান, দাবি কিছুদিনের মধ্যে না মানা হলে আবারও রাজপথে কঠোর কর্মসুচী ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিবেন বলে জানান।