বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বসন্ত-ভালোবাসায় মাখামাখির পাঁচ বছর
উৎসবের আমেজ বিবেচনায় বাঙালি সংস্কৃতিতে শক্ত অবস্থানে পহেলা বৈশাখ। কম নয় পহেলা ফাল্গুনও। বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হওয়া দিনটিও বাঙালির আনন্দ-উৎসবের নতুন রূপ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে রূপকথার দেশ রোমের ‘ভালোবাসা দিবস’। বাংলা বর্ষপঞ্জির সংশোধনীতে মিলেমিশে একাকার বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। দুই দিবস ও সময়ের পরিক্রমায় উৎসবপ্রেমীদের কাছে ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে উঠেছে অন্যরকম এক দিন। গলাগলি ধরে কিংবা মাখামাখি করে বসন্ত-ভালোবাসা যেন এখন ‘সবচেয়ে বড়’ উৎসব।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ উদযাপন করা হতো। ওইদিন পড়তো পহেলা ফাল্গগুন। ২০২০ সল থেকে পাল্টে গেছে নিয়ম। সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস।
ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারাবিশ্বে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন পালিত হয় বসন্ত উৎসব। দুটি দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি পড়ে যাওয়ায় উন্মাদনা বেড়েছে। এবার নিয়ে টানা পাঁচ বছর বসন্ত-ভালোবাসা দিবস গলাগলি ধরে উদযাপিত হচ্ছে।
বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হচ্ছে। তবে গ্রেগরিয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি।
২০২০ সালে প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পড়ে। সেবার থেকেই বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের একসঙ্গে পথচলা। জোড়া দুই দিবসের একসঙ্গে পথচলায় বাড়তি উন্মাদনা ছড়িয়েছে দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। বছরজুড়ে অনেকে এ দিনের অপেক্ষায়ও থাকেন। অনেকে এ দিনে প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে ফেলেন।
বসন্ত উৎসব যেভাবে এলো
ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামে নক্ষত্র থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয়ই মেনে চলা হতো। ফাল্গুন ছিল পূর্ণ চন্দ্রের মাস।
১৯৫০-১৯৬০-এর দশকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়। সেসময় বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করতে রবীন্দ্র সংগীত শোনার পাশাপাশি বাঙালি নিয়মে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু করে।
বসন্ত নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গান, অনেক কবিতা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘বসন্ত নিয়ে জনপ্রিয় একটি গান হচ্ছে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা ও গান।
পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ যেমন, তেমনি এ মাসের রাজনৈতিক গুরুত্বও অসীম। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর ফাগুনের শহীদদের কথা।
মনে করিয়ে দেয় ভাষাশহীদদের রক্তের ইতিহাস। এ মাসেই মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন রফিক, বরকত সালামরা। তাদের রক্তের সোপান বেয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই ফাগুন বাঙালির দ্রোহেরও মাস।
ভালোবাসা দিবসের প্রচলিত ইতিহাস
ভালোবাসা দিবস নিয়ে প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী।
সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সেই থেকেই দিনটির শুরু।
এদিকে, প্রথমদিকে পশ্চিমা বিশ্বে এ দিবস উদযাপনে উৎসাহ দেখা যায়। ক্রমে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেও ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস উদযাপন শুরু হয়। গত দুই দশক ধরে এ দিবস ঘিরে বাঙালি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়েছে।