প্রতিকী ছবি।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তারা সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এলিন লাউবাকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলটি গত শনিবার ঢাকায় আসে। এই প্রতিনিধিদলে আরো রয়েছেন, ইউএসএআইডির এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী আফরিন আক্তার। সফরের দ্বিতীয় দিন গত রবিবার প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুু পরিবর্তনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
রবিবার বিকালে এনএসসির জ্যেষ্ঠ পরিচালক এলিন লাউবাকেরের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে। কীভাবে সম্পর্কটাকে আরো গভীরতর করতে পারি এবং সম্পর্কের নতুন যুগ কীভাবে শক্তিশালী করতে পারি, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। যেহেতু দুই দেশেরই সদিচ্ছা আছে, সুতরাং এই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, গভীরতর করার মাধ্যমে উভয় দেশ উপকৃত হবে।
তিনি জানান, কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির জবাবে জো বাইডেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠির একটি কপি মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান হোয়াইট হাউজে ঐ চিঠির মূল কপি পৌঁছে দেবেন।
বৈঠকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে মিয়ানমারের যুদ্ধ ও তার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে বঙ্গোপসাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের কারণে আমাদের এখানে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গারা সসম্মানে, সব ধরনের অধিকারসহ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াই যে একমাত্র সমাধান, এটির ব্যাপারে তারাও একমত।
সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে জিসোমিয়া এবং আকসা নামে দুটি চুক্তির কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি নিয়ে আলোচনা করিনি। তবে জিসোমিয়াকে আমরা বিবেচনা করছি, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র্যাবের কার্যক্রমের বিষয়ে পাঁচটি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেগুলো বিস্তারিত পেলে কাজ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে আছে। আমাদের জানিয়েছে যে, তারা বিচার বিভাগ থেকে একটা সিদ্ধান্ত চেয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ভোগান্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে মন্ত্রী বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন কর্মকর্তা এলিন লাউবাকের বলেন, অভিন্ন অগ্রাধিকার ও ভবিষ্যতে একযোগে কাজ করার পথ নিয়ে আলোচনা করেছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে এদিন দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠকের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে। আমাদের দুই দেশ কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম এবং বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে জানানো হয় ঐ পোস্টে।