আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটিই প্রশ্ন, গণতন্ত্র কোথায় গেল? সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায় গেল?’আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণের পরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।মঈন খান বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য ও আদর্শ নিয়ে লাখো মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সেই আদর্শের জন্য নাম ছিল গণতন্ত্র এবং উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা।’তিনি বলেন, ‘একটি সরকার আজকে দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, তারা বাস্তবে করেছে এক দলীয় শাসন। এবার করেছে বাকশাল টু। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা।’
বিদেশে লাখো কোটি টাকা পাচার হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আজকে আপনারা দেখছেন, কীভাবে মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে।’
ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা করা হয়েছে দাবি করে মঈন খান বলেন, ‘৫০ লাখের মতো নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে তাদের আসামি বানানো হয়েছে। এখানে যদি মানুষের ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ না থাকে, এ দেশে যদি মানুষের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে, তাহলে আজকে কবরে শায়িত মুক্তিযোদ্ধারা কেন তারা দেশ স্বাধীন করেছে, কেন তারা জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছে?’স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক কীভাবে ঘোষক হয়? ওবায়দুল কাদেরের এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, ‘চমৎকার প্রশ্ন। তবে আমি ব্যক্তি প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না। আপনারা জানেন, ব্যক্তি রাজনীতি আমরা করি না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশ বড়। আজকে অন্তত স্পষ্ট, যখন সেই ২৫ মার্চের কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। সেদিন আজকের যে আওয়ামী লীগ, যারা নিজেদের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে দাবি করে, তারা সেদিন কেন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল?’
তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ দিতে পারবে, আমরা দিতে পারব না, আমরা দিতেও চাই না। যে কারণে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করে তুলে ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেদিনের যেভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই কথা ইথারে ভেসে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।’
‘এর সঙ্গে আরেকটু কথা যোগ করে দিতে চাই, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছিলেন। পালিয়ে লুকিয়ে থাকেননি কলকাতার আরাম আয়েশে। তিনি যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম উপাধি দিয়েছিলেন। আরও একটি তথ্য আপনাদের উদ্দেশ্যে দিতে চাই, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রীয় ভোজসভা দিয়ে জিয়াউর রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভবনে শহীদ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে সম্মান জানিয়েছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্কের সুযোগ রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা তো বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের মতো আমরা কেউ কিছু বললে টুঁটি চেপে ধরি না। কাজেই ভিন্নমত পোষণে গণতন্ত্র থাকবে। ইতিহাসই সব কথা বলে দেবে।’
কেন বিভাজন তৈরি হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটি সরকারকে করতে হবে। সরকার কেন বিভাজন তৈরি করেছে? আজকে দুঃখ এবং লজ্জার সঙ্গে বলতে হয়, এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যে কারণে তারা আজকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়ে, একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে চায়।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।