নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসে কোটি কোটি টাকা বিল আদায় করছে দালালরা। প্রতিটি বাড়ির অবৈধ চুলা হিসাব করে তারা বিল নিচ্ছে। এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আবাসিক বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন এবং বিল নিচ্ছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন।গতকাল বৃহস্পতিবার কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অভিযানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযানে ৪৮টি বাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার ম্যানেজার প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান চালানোর সময় কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে বিস্ময়কর তথ্য জানতে পেরেছি। প্রত্যেক বাড়ির মালিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা করে নিয়ে অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগ দিয়েছে কিছু দালালচক্র। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে কয়টি চুলা ব্যবহার করা হয়, সে হিসাব করে মাসে মাসে বিল নিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, তারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোক।’অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগ দিয়ে কারা বিল আদায় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিতাসের এ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে বাড়ির মালিকদের কাছে থেকে জানা গেছে, কদমতলী এলাকার জহির, তুহিন, জীবন, হিজড়া আলমগীর, সাইদুর রহমান সাজু, খায়ের, সুমন, দুলাল ও বাবুল ওরফে গ্যাস বাবুল এসব সংযোগ দিয়ে বিল নিচ্ছে। একই এলাকায় আরও বহু বাড়িতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হবে। অবৈধ গ্যাসলাইন ও বিল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিতাসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এলাকায় মাইকিং করা হবে যাতে কেউ অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার না করেন। যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে গোটা এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
অবৈধদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা কেন গ্যাসবঞ্চিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিযান চালাতে এসে দেখা গেছে, কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় একশ বাড়ির মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে বৈধ গ্যাস রয়েছে। তারাও অনুমোদনের চেয়ে বেশি চুলা ব্যবহার করছেন এবং এক-দুই বছর ধরে বিল দিচ্ছেন না। তাই এমন বৈধ গ্রাহকের জন্য ৯৫ শতাংশ অবৈধদের সুবিধা দেওয়া যায় না।’তিতাসের এ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। চুলা হিসাব করে তিতাস কর্তৃপক্ষের অজান্তে প্রতিটি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে অন্তত কোটি টাকা বিল নিচ্ছে চক্রটি।
স্থানীয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের আমি চিনি না। আমার কোনো লোক এসব কাজে জড়িত নয়।’