আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো কাতার বিশ্বকাপ। রোববার রাতে কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মেসি-ডি মারিয়ার আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে ১৯৮৬ সালের পর শিরোপা জিতলো বিশ্বকাপের। দিয়েগো ম্যারাডোনার পর লিওনেল মেসির যাদুতে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতলো লাতিন আমেরিকার পরাশক্তিরা। ২০ নভেম্বর স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যে ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছিল বিশ্বকাপের। পর্দা নামলো আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফাইনাল দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর। এই এক মাস বিশ্বকাপ ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ছিল ফুটবলময়। কেবল কাতারই নয়, বিশ্বকাপ ঘিরে উচ্ছ্বাস-উম্মাদনা ছিল সারা দুনিয়ায়। বিশ্বকাপ কোটি কোটি মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসায় এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছিল দুনিয়ার সব ফুটবলপ্রেমীকে। ফাইনালের মধ্যে দিয়ে ভাঙ্গলো ফুটবলের মিলন মেলা। জাপান-কোরিয়ার পর এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে কাতার রেখে গেলো আয়োজনের দিক দিয়ে ঐতিহাসিক সাফল্যের স্বাক্ষর। ফিফা প্রেসিডেন্ট কাতারকে বাহবা দিয়ে এই আসরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে।
আগামী চার বছর চ্যাম্পিয়নের জার্সি জড়িয়ে বিশ্বফুটবলে মাথা উঁচু করে চলবে আর্জেন্টাইনরা। ২০২৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দল উপহার দেওয়ার আগ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নের লেবাস পরে থাকবে মেসি-ম্যারাডোনার দেশ।
পরের বিশ্বকাপ তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। এই প্রথমববারের মতো দুইয়ের অধিক দেশ যৌথভাবে আয়োজন করবে বিশ্বকাপ। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলো আবার প্রস্তুতি শুরু করবে পরের বিশ্বকাপের জন্য। ৩২ দলের মধ্যে কারো কারো স্বপ্ন থাকবে ভালো খেলা, কারো কারো চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এশিয়াতে এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এর আগে ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ায় হয়েছিল এশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশ কাতার দেখিয়ে দিয়েছে তারা কতটা সফল। ফিফা যেদিন ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা দিয়েছিল তারপর থেকেই পরিশ্চমা কিছু দেশে সমালোচনায় গলা ফাটিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল ছোট দেশ কিভাবে এত বড় আয়োজন করবে? কিন্তু সব সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়ে কাতার প্রমাণ করেছে বিশ্বকাপ আয়োজনে তারাই সেরা। যদিও নিজেদের বিশ্বকাপে দল হিসেবে কাতার মোটেও ভালো করতে পারেনি। এশিয়ার দেশ জাপান, দক্ষিণ কেরিয়া চোখ ধাঁধানো ফুটবল উপহার দিলেও এশিয়া চ্যাম্পিয়ন কাতারের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। কাতার বিশ্বকাপের শেষটা হয়েছে মেসির ভুবন মোহিত করা হাসি দিয়ে। তার আগে মাত্র ১৫ মিনিটের সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতাও ছিল। বিশ্বকাপ জিতে মেসি তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে যোগ করলেন সবচেয়ে বড় সাফল্য। আগের চারটি বিশ্বকাপে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও করলেন নিজের শেষ বিশ্বকাপে। এ সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা ফুটবলার কোন আফসোস না নিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারবেন। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফাইনাল ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল বিশ্বের বহু দেশে। বাংলাদেশ যেন ছাড়িয়ে গিয়েছিল সব কিছু। মাসব্যাপি ফুটবল নিয়ে যে উম্মাদনা ছিল তার শেষ হলো ফাইনালের মধ্যে দিয়ে। সেই সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপকে বিদায় জানিয়েছে সবাই। এখন অপেক্ষা ২০২৬ সালে তিন দেশের আয়োজনের বিশ্বকাপ ঘিরে। কাতারের মিলনমেলা ভেঙ্গে যাওয়ায় শুরু উঠেছে বিদায় কাতার, দেখা হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে।