জরুরি ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থা না নিলে দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব খারাপ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা জোর দিয়ে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা অপ্রতুল। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি উদ্যোগ নেই।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, সব জায়গায় ফগিংয়ের পরিবর্তে লার্ভা ধ্বংস ও প্রজননস্থল নির্মূলে যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘ফগিং শুধুমাত্র সেইসব এলাকায় করা উচিত যেখানে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বত্র ফগিং করা হলে সেটা তেমন কার্যকর হয় না। তারপরও এটাকেই এখন প্রধান পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতর ও আশপাশে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার আরও ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের প্রতিটি জেলা।
অধ্যাপক কবিরুল বলেন, ‘এডিস মশা এখন প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মানুষ সাধারণত এই সময়ে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে, যেগুলো এডিস মশার প্রজননস্থল হয়ে ওঠে।’
একই মত প্রকাশ করে কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান মশার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘এডিস মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। একবার কোনো মশা সংক্রমিত হলে, সেটি সংক্রমিত ডিম পাড়ে এবং এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
তিনি মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক ও কাঠামোগত পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য একটি পৃথক ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ বিভাগ গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই বিভাগের কাজ হবে ক্লাস্টার শনাক্তকরণ, নজরদারি ও লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া। কাঠামোবদ্ধ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়া যত প্রচেষ্টাই করা হোক না কেন, কেবল ব্যর্থই আসবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন—এর মধ্যে বরিশাল বিভাগেরই ১১৬ জন।
বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে, আর আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৮০। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ২৪০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যার মধ্যে ৮৫৩ জন ঢাকার বাইরে।