তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্তরা যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোর নিশ্চিত ২৫০ পার হয়ে যাবে। কিন্তু ইংলিশদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ৪৭.২ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেলো মাত্র ২০৯ রানে।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৬তম ম্যাচে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। তার ৫৮ রানের ওপর ভর করেই দলীয় স্কোর ২০০ পার হলো। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ৫০০ রানও তুলে ফেলে এই ইংলিশরা। কিন্তু বাংলাদেশের স্লো এবং লো ট্র্যাকে যে এতরান উঠবে না সেটা আগেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার।
বাংলাদেশের স্পিনিং ট্র্যাকে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য তিন স্পিনার খেলিয়েছে ইংলিশরা। আদিল রশিদ, মঈন আলি এবং উইল জ্যাক। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে উইল জ্যাকের। অভিষেকেই বাজিমাত করেছেন তিনি। ৫ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আফিফের উইকেট নিয়েছেন তিনি। মঈন আলি এবং আদিল রশিদ নিয়েছেন ২টি করে ৪টি উইকেট। বাকি ৫ উইকেট নিয়েছেন তিন পেসার ক্রিস ওকস, জোফরা আরচার এবং মার্ক উড।
সকালে টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর সূচনাটা দারুণ করেছিলেন ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। শুরু থেকে মারমুখি ছিলেন তামিম। লিটনও মারমুখি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। যে কারণে দেখা গেলো ৫ম ওভারে ক্রিস ওকসের ৪র্থ বলটিকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে সোজা বাউন্ডারির ওপারে নিয়ে ফেলেন লিটন দাস। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ছক্কা মারার পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার। ওকসের বলটি অফ স্ট্যাম্প ঘেঁষেই বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাট এবং প্যাড একসঙ্গেই পেতেছিলেন লিটন। কিন্তু ব্যাট ফাঁকি দিয়ে গিয়ে বলটি প্যাড ছুঁয়ে চলে যায়। জোরালো আবেদন তুলতেই আম্পায়ার তানভির আহমেদ আঙ্গুল তুলে দিলেন। রিভিউ নিয়েছিলেন লিটন এবং তামিম। কিন্তু লাভ হলো না। আম্পায়ারস কল। বল অফস্ট্যাম্প হয়তো মিস করতো না। তবে একেবারে আলতো ছুঁয়ে যাওয়ার মত বল ছিল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখলেন টিভি আম্পায়ার সরফুদ্দৌলা। ১৫ বলে ৭ রান করে বিদায় নিলেন লিটন। লিটন বিদায় নেয়ার পর কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে যান তামিম ইকবাল। যদিও নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ১০ম ওভারে সর্বনাশটা ঘটে গেলো। ১৪৯ কিলোমিটারের প্রচণ্ড গতির একটি বল ডেলিভারি দিলেন মার্ক উড। গতির কাছেই পরাস্ত হয়ে গেলেন তামিম। গুড লেন্থের বলটি হালকা বাউন্স হয়েছিলো। লেগ সাইডে থাকা বলটি তামিম হালকা লাফ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বলটি ব্যাটের নিচের কানায় লেগে চলে যায় স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন তামিম। ৩২ বলে ২৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার। বিপিএল ফাইনালে অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিলো, মুশফিকুর রহিম বুঝি তার খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠেছেন। এবার জাতীয় দলের হয়েও তিনি ভালো ব্যাটিং করতে পারবেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরবেন বিপিএল ফাইনালের মতো। কিন্তু মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পারলেন না মুশফিক। তামিম ইকবাল আউট হওয়ার পর চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন মুশফিক। সাকিব চার নম্বরে ব্যাট করার কথা থাকলেও মুশফিক চারে নামেন। জুটি বাধেন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে। কিন্তু ৩৪টি বল খেলে মাত্র ১৬ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। এর আগে একবার ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে ফিল সল্টের অসতর্কতায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে রানই করতে পারছিলেন না। টানা আট বল ডট খেললেন। অষ্টম বলে এসে অধৈর্য্য হয়ে আদিল রশিদকে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন মার্ক উডের হাতে।
বিপিএলে দারুণ খেলেছিলেন সাকিব আল হাসানও। মুশফিক আউট হওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে ছিল আশার আলো। কিন্তু সাকিবও হতাশ করলেন। কেবল ১২ বলে ৮ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। মঈন আলির বলে বোল্ড হয়ে যান সাকিব। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে জুটি বাধেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই জুটিটাই যা একটু আশার আলো দেখিয়েছিলেন। ৫৩ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা দু’জন। তার আগেই ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন শান্ত। ১৬তম ওয়ানডেতে এসে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
হাফ সেঞ্চুরি করার পর ইনিংসটা বড় করতে পারেননি শান্ত। ৮২ বলে ৫৮ রান করে আদিল রশিদের বলে শর্ট মিডউইকেটে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও চেষ্টা করেছিলেন একটি ভালো ইনিংস খেলার। কিন্তু ৪৮ বলে ৩১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।
আফিফ হোসেন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো ব্যাটিং করতে পারেননি। আফিফ ১২ বলে ৯ রানে এবং ১৯ বলে ৭ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৮ বলে ১৪ রান করে আউট হন তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ১০ রান করে আউট হন। অতিরিক্ত থেকে আসে ২৬ রান।