লাঙ্গল দিয়ে মাটি কর্ষণ করে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নারায়নণ গঞ্জ জেলার ‘লাঙ্গলবন্দ’ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। সুদূর হিমালয় থেকে হাল চালনায় ক্লান্ত হয়ে পরশুরাম বিশ্রাম করার জন্যে এখানে লাঙ্গল বন্ধ রাখেন বলে স্থানটির নাম হয়।
‘লাঙ্গলবন্দ’। পৌরণিক কাহিনীতে যা পাওয়া যায় – ‘লাঙ্গল বন্দ’ তীর্থের উৎপত্তি সম্বন্ধে কালিকা পুরাণ (৮৪/৮৫ অধ্যায়) আছে : শান্তনু মুনির পত্নী অমোঘা দেবী ব্রহ্মার তেজ গর্ভে ধারণকরে এক সুন্দর পুত্র সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের পূর্বে
মুনি উত্তরে কৈলাস, পূর্বে সম্বর্তক, দক্ষিণে গন্ধমাদন ও পশ্চিমে জারুধি এই চার পর্বতের মধ্যে একটি কুণ্ড খনন করে রাখেন। প্রসবান্তে পুত্রটিকে সেই কুন্ডে স্থাপন করেন এবং ব্রহ্মা এসে ঐ পুত্রকে দেখে নাম রাখেন ‘লোহিত্য’। কিছুদিন পরে পুত্র জলে দেহ বিস্তার করে কুন্ড মধ্যে অবস্থান করেন। সে হতে ইহা ‘ব্রহ্মকুন্ড’ নাম হয়।
ত্রেতা যুগে জমদগ্নি নামে এক মুণি ছিলেন। রেণুকার সাথে তার বিবাহ হয়। তাদের ছিল পাঁচ পুত্র সন্তান। কনিষ্ঠ সন্তানের নাম হলো পরশুরাম, বিষ্ণুর দশম অবতারের মধ্যে ষষ্ঠ অবতার। মহা তপস্বী জমদগ্নির সহধর্মিনী রেণুকা এক দিন নদীতে জল আনতে গিয়ে পদ্ম মালাধারী রূপবান চিত্র রথকে দেখে মোহিত হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং সময় মতো গৃহে ফিরবার কথা ভুলে গিয়েছিলেন। এদিকে হোমাদি কর্ম অতিবাহিত হল। জমদগ্নি ধ্যানে জানতে পারলেন রেণুকা অন্য পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। রেণুকার যখন গৃহের কথা মনে পড়ল তখন হতচকিত হয়ে দ্রুত গতিতে গৃহে এসে ক্রুদ্ধ পতির সম্মুখে অধোমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। জমদগ্নি তখন তার চার পুত্র রুমন্বান, সুষেণ, বসু ও বিশ্বাবসু কে ফল সংগ্রহ করে গৃহে ফিরে আসতে দেখে তাদের কে তীব্র ভাবে নির্দেশ দিলেন, তাদের মাতার মস্তক ছেদন করতে। কিন্তু তারা সবাই পিতৃ নির্দেশ পালনে পরামুখ হলেন। তখন জমদগ্নি সেই পুত্রদের অভিশাপ দিলেন, তোমরা জ্ঞানহীন জড়ের মতো হয়ে যাও।
সেই সময় কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরাম সেখানে এসে পৌঁছালে জমদগ্নি তাকে নির্দেশ দিলেন বৎস, কোন প্রশ্ন না করে অক্ষুব্ধচিত্তে তোমার পাপা চারিণী জননীকে এক্ষুনি সংহার কর। পিতার প্রভাব পরশুরাম জানতেন। তাই তিনি তৎক্ষণাৎ মাতার শির ছেদন করলেন।
তখন জমদগ্নির ক্রোধ শান্ত হল। তিনি প্রসন্ন হয়ে বললেন, বৎস আমার নির্দেশে তুমি অতি দুষ্কর কর্ম সম্পাদন করেছ। এখন তোমার অভিলাষ অনুসারে“বর”- প্রার্থনা কর। পরশুরাম বললেন, হে পিতা যদি প্রসন্ন হয়ে থাকেন, তাহলে আমার জননীর পুনজীবন লাভ হোক, আমি যে তাকে বধ করেছি সেকথা যেন তার স্মৃতিতে উদিত না হয়, আমার ভাইয়েরা পুনচৈতন্য লাভ করুক। জমদগ্নি তথাস্ত বলে পরশুরামকে তৎক্ষণাৎ সেই বর দান করলেন মাতা রেণুকা এবং ভাইয়েরা যেন নিদ্রা থেকে আনন্দে জেগে উঠলেন। কিন্তু পরশুরামের হাতে মাতৃ হত্যার ঐ কুঠারটি লেগে থাকে। পিতার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে পিতা বলেন ‘তুমি মাতৃ হত্যা আর নারী হত্যা’ এই দ্বিবিধ পাপেই আক্রান্ত হয়েছ। আর জেনে রেখো, পাপ ছোট বা বড় যা-ই হোকনা কেন কৃতকর্মীকে তা স্পর্শ করবেই।’
তারপর পুত্রকে আশ্বস্ত করে ব্রহ্মকুন্ডে স্নান করার উপদেশ দিয়ে বলেন ‘যে তীর্থ গমনে বা স্নানে তোমার হাতের কুঠার স্খলিত হবে, জানবে যে ঐ পুণ্য স্থানই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র।’
পিতৃ আজ্ঞায় পরশুরাম তীর্থ পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মকুন্ডে পৌঁছে স্নান করার সাথে সাথে তাঁর হাতের কুঠার পতিত হয়ে যায় এবং সর্ব পাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন। তিথিটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি বুধবার পুনর্বসু নক্ষত্র। পরে পরশুরাম চিন্তা করলেন এমন সুমহান পুণ্য জনক জলকে সকলের সহজ লভ্য করার জন্য এর ধারা পৃথিবীতে নিয়ে আসবেন। পিতৃ আজ্ঞায় ব্রহ্মকুন্ডের জলধারাকে এ পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য পরশুরাম হাত থেকে স্খলিত কুঠার দিয়ে ব্রহ্মকুন্ডের জলধারাকে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত আনতে সক্ষম হন। তারপর লাঙ্গল