নিজস্ব প্রতিনিধি: বন্দরে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া মেরাজুল ইসলাম জয়কে নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা। মাহে রমজানের এ মাসে এক যুবককে এভাবে খুন হতে হবে, এটা হয়তো বন্দরবাসী কল্পনাও করেনি। দিন যতই যাচ্ছে মেরাজ হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে গোটা বন্দর। ইতিমধ্যেই হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবিতে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বন্দরবাসী। তবে এ হত্যাকান্ড নিয়ে বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এ হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত ৩ এপ্রিল রাতে বন্দরে মেরাজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারন জনগণের সাথে মিশে যায় স্ট্যান্ড রাজু ও শুভর মত কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। মুহুর্ত্বেই তারা জনগণকে উত্তপ্ত করে তুলে। উস্কানি দেয় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের। পরে তাদের নেতৃত্বে চলে তান্ডব। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা একে একে হামলা চালায় স্থানীয় কাউন্সিলর শাহীন মিয়া, রূপালী আবাসিক এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি দুলাল মিয়াসহ তার সমর্থক ও বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে। এসময় তারা হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাটও চালায়। সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র থাকায় ভয়ে কেউ টু শব্দটিও বলতে পারেনি। ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত চলে এ লুটপাট। পরে ৫ এপ্রিল লুুটপাটের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা লুটপাটের কিছু মালামাল রেখেই পালিয়ে যান। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লুটের মালামালসহ দুটি নছিমন গাড়ীও আটক করে।
এদিকে কাউন্সিলর শাহীনের বাসায় হামলার সময় জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে শাহীনের স্ত্রী-সন্তানসহ গোটা পরিবার। তারা বাসার ভিতরে ছটপট করতে থাকেন। পরে জীবনের নিরাপত্তার জন্য বন্দর থানা পুলিশকে একাধীকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু কলটি রিসিভ না হওয়ায় আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েন তারা।
মেরাজ হত্যাসহ সেদিনের হামলার বিষয়ে কাউন্সিলর শাহীনের স্ত্রী মীরা খন্দকার বলেন, মেরাজ খুনের ঘটনা যেসময় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সময়ে আমার হাসবেন্ড (কাউন্সিলর শাহীন) আমাদের বাসায়ই ছিলো। ওনি ইফতারের প্রায় আধা ঘন্টা আগে কলা নিয়ে বাসায় ফিরেন। ওনি যে দোকান থেকে কলা কিনেছেন এবং তাকে যারা কলা বাছাই করতে সহযোগীতা করেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমার হাসবেন্ড সেদিন বাসায় ফিরে আমাদের সকলের সাথে ইফতার করেন। পরে তিনি নামাজের জন্য রওয়ানা হন। তবে তার পেটখারাপের জন্য তিনি টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে আসার পর আমি আমার হাসবেন্ডকে বলি, এখনতো নামাজের ওয়াক্ত পাবেনা, বাসায় নামাজ পড়। পরে ওনি বাসায় নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে ঘরে বসে রিমোট হাতে নিয়ে টিভিতে খেলা দেখেন। কিন্তু পরে দেখলাম, মেরাজ হত্যা মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। যে মানুষটি আমাদের সাথে ইফতার করলো, বাসায় নামাজ পড়লো, সেই মানুষ কখন কিভাবে গাড়ীতে বসে মেরাজ ও আল আমিনকে হত্যার নির্দেশ দিলো? এই প্রশ্ন আমি প্রশাসনের কাছে রাখতে চাই।
কাউন্সিলর শাহীনের স্ত্রী মীরা খন্দকার আরও বলেন, হাসপাতালে বসে আল আমিন যে বক্তব্য দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এর স্বাক্ষী আমি নিজেই। তবে আল আমিন কেন এমন মিথ্যা বক্তব্য দিলো, তা আমার বোধগম্য হয়না। আমার মনে এখানে তৃতীয় কোন পক্ষ কাজ করছে। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাবো, আপনারা আল আমিনকে আপনাদের হেফাজতে নিয়ে ভালো করে জিজ্ঞেসাবাদ করুন, আমার হাসবেন্ড আদৌ এ খুনের সাথে জড়িত কি না? আমি আপনাদের (প্রশাসনের) কাছে এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়াও তিনি তাদের বাসাসহ বিভিন্ন বাসায় সন্ত্রাসীদের হামলা ও লুটপাটের বিষয়ে বলেন, সেদিন ছিলো আমাদের কাছে এক ভয়াল রাত। প্রথমে দেখলাম আমাদের বাড়ীর সামনে একটু হৈ চৈ। কিছু চেনা অচেনা মানুষের আনাগোনা। শুনলাম দুই রাজুর মধ্যে নাকি ঝগড়া লাগছে। পরে দেখলাম আমাদের গেটের সামনে থেকে ভাংচুরের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কি করবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে থানায় ফোন দিলাম। কিন্তু কোন কর্মকর্তা ফোন ধরছেনা। পরে আরও বেশি ভয় পেয়ে যাই। বুঝতে পারছিলাম না, কেন আমাদের বাসায় হামলা চালানো হচ্ছে। পরে শুনলাম, শুধু আমাদের বাসায়ই নয়, যারা আমার হাসবেন্ডের সাথে নির্বাচনে কাজ করেছে, তাদের সবার বাসায়ই হামলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল (সোমবার) সন্ধ্যায় বন্দরের রূপালী আবাসিক এলাকায় পূর্ব শত্রæতার জের ধরে মেরাজ (২০) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় আল-আমিন (২৭) নামের আরও এক যুবক আহত হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার ) রাতে নিহত মেরাজুলের মা নাসরীন আক্তার বন্দর থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন মিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।