আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যে কোনো ধরনের অন্যায় বা কারচুপি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের মাধ্যমে ঠেকাতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ জনবল ভোটের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখবে। কিন্তু কেন্দ্রের ভেতরে যেন কোনো কারচুপি না হয় সেটি পোলিং এজেন্টকে নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ শহরের টাউনহল এলাকায় অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি কেন্দ্রে তাদের ১২ জন সদস্য থাকবে। তাদের কেউ কেউ সশন্ত্র অবস্থায় থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন থাকবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কেন্দ্রে শুধু ১২ জন পুলিশ সদস্য থাকলে প্রার্থীরা তাদের হাত করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু কেন্দ্রে যদি পাঁচ বাহিনীর লোক থাকে তাহলে কাউকে হাত করতে পারবেন না। কাজেই সেখানে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী থাকবে। কেন্দ্রের বাইরের অংশ পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে।
তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলেছি, কেন্দ্রের ভেতরে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হলে দায় নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রিসাইডিং অফিসার সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেবে। প্রয়োজনে রিটানিং অফিসারকেও খবর দিয়ে ভোট বন্ধ করে দেবে। বন্ধ হওয়া কেন্দ্রের ভোট পরে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেই কেন্দ্রে ১০ বার ভোটগ্রহণ করে তা সুষ্ঠু করা হবে।
সিইসি বলেন, প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছেন না, বিষয়টি এমন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। আমি সব প্রার্থীকে প্রস্তুতি নিতে বলেছি। ভোটের দিন তাদের সতর্ক থাকতে হবে। কিছু কিছু আচরণবিধি; কে কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলল, এটা-ওটা অভিযোগ করেন। কিন্তু এটা আপনাদের বিপর্যস্ত করবে না। ভোটের দিন যদি প্রার্থী কারচুপি করে ফেলতে পারে তাহলে কিন্তু ভোট অবাধ-নিরপেক্ষ হবে না।
প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, কাজেই পোলিং এজেন্ট দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো রকমের অন্যায় বা কারচুপি হয়নি। এটা তারাই নিশ্চিত করবেন। এটা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীরা তাদের বিশ্বস্ত এবং দক্ষ পোলিং এজেন্ট দেবেন। পোলিং এজেন্টরা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ঢালাওভাবে বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বদলি করেছি, অভিযোগের ভিত্তিতেও বদলি করা হয়েছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওসি, এসপি, ডিআইজি, আইজি; যিনি যে কেন্দ্রে যান না কেন, খেলাটা হবে কিন্তু প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের দিন। ভেতরে কিন্তু আইজি সাহেবও ঢুকতে পারবেন না, ডিআইজি সাহেবও ঢুকতে পারবেন না, ডিভিশনাল কমিশনারও ঢুকতে পারবেন না। শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি আছে, তিনি ঢুকতে পারবেন, দেখতে পারবেন। কাজেই কোন ওসিকে বদলি করলাম, কোন ওসিকে বসালাম, এগুলো অনেক সময় একটা বিশ্বাস; ওই ওসি সাহেব হলে আমার জন্য ভালো হয়, ওই ওসি সাহেব আমার জন্য খুব ভালো হবে না—আমরা এটা গবেষণা করে দেখেছি, ভেতরে যদি প্রিসাইজিং অফিসার তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে, তাহলে ওসি সাহেব, ইউএনও সাহেব, ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব ভেতরে গিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। আর যদি কেউ কিছু করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, এসপি মাছুম আহম্মেদ ভূঞা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।