নতুন বছরে তাকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখতে অনুরোধ করেছেন। ঘুরিয়ে বললে, তামিম আর বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকতে চাচ্ছেন না। বিসিবির সিনিয়র পরিচালক ও জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনায় থাকা স্ট্যান্ডিং কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুসের দেওয়া তথ্য এটা।
গতকাল রোববার বিকেলে স্থানীয় মিডিয়ার কাছে এ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে জালাল জানিয়েছেন, ‘তামিমের নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে। তার আগে যেন আমরা তাকে চুক্তিতে না রাখি। সে চেয়েছে এখন না রাখতে, পরে বিসিবি সভাপতির সাথে বসার পর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সে আমাদের জানাবে যে, কী করতে চাচ্ছে।’
জালাল ইউনুসের মতো বিসিবির অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার প্রচার মাধ্যমে এ খবর খুব গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়েছে। খবরটি বেশ আলোচিতও হয়েছে।
পাশাপাশি প্রশ্নও উঠেছে। তামিম ভক্ত-সমর্থক আর বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের প্রায় সবার মনেই ঘুরে-ফিরে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহ লো তামিম হঠাৎ বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকতে চাচ্ছেন কেন?
তবে কি তিনি আর কোন ফরম্যাটে জাতীয় দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চান না? আরও পরিষ্কার করে বললে, তামিম কি তাহলে জাতীয় দলের পক্ষে আর কোন ফরম্যাটে খেলতে চান না? যদি খেলতেই চাইবেন, তাহলে তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখার প্রস্তাব কেন?
আগেই জানা, তামিম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন এবং টেস্ট, ওয়ানডেতেও তিনি নিয়মিত নন। শেষ ওয়ানডে খেলেছেন বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর)। আর শেষ টেস্ট ম্যাচে তামিমের দেখা মিলেছে গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের আগে অনেক নাটকের পর তামিম জানিয়ে দেন, তিনি আর লাল সবুজ জার্সি গায়ে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন না। এরপর হঠাৎ গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন দেশের সব সময়ের এক নম্বর ওপেনার।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুনরায় ফিরে আসেন এবং আগস্টে ইংল্যান্ডে চিকিৎসা করে এসে এশিয়া কাপের আগে বলেন, ‘আমি আর ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করবো না। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে খেলবো।’
এরপর দল ঘোষণার আগে দেখা গেলো ফিটনেসের কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই নেই তামিম। পরে জানা গেছে, অধিনায়ক সাকিব এবং কোচ হাথুরুসিংহের ইচ্ছায়ই বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তামিমের।
এদিকে বিশ্বকাপের পর মাঠে ফেরেননি তামিম। ইনজুরি কাটিয়ে বিপিএল দিয়ে মাঠে ফেরার ঘোষণা দেন। ধারণা ছিল, বিপিএলের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে কথাবার্তা বলে আবার টেস্ট এবং ওয়ানডে দলে ফিরবেন; কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে সম্ভাবনাও সুদূর পরাহত। সম্ভবত আর জাতীয় দলের হয়ে মাঠে না ফেরার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন তামিম।
এখন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যদি তাকে বুঝিয়ে মাঠে ফেরাতে রাজি করাতে পারেন, সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু এমনিতে তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
এদিকে ক্রিকেট পাড়ায় একটি গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে। তাহলো, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকা নিয়ে ভীষণ মনোক্ষুণ্ন তামিম ইকবাল। তার ধারণা কোচ হাথুরুসিংহের কারসাজিতেই তার বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি।
তাই তিনি হাথুরুর অধীনে জাতীয় দলে খেলার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। ক্রিকেট পাড়ায় চাউর হয়েছে, তামিম নাকি বোর্ডকে বিশেষ করে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকে অনুরোধ করেছেন, হাথুরুকে কোচের পদ থেকে সরিয়ে দিতে। হাথুরু না থাকলে তিনি ওয়ানডে-টেস্টের হয়ে ২ ফরম্যট না হয় অন্তত এক ফরম্যাটে জাতীয় দলে থাকতে পারেন।
কিন্তু হাথুরুর সাথে বোর্ডের চুক্তি আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তাই তাকে এখন বিদায় করার অর্থ প্রচুর পরিমাণ অর্থদণ্ডের মুখোমুখি হওয়া। জানা গেছে, বিসিবির মাথায় তাই হাথুরুকে পদচ্যুত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। সে কারণেই নাকি তামিম তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখতে বলেছেন।
এখন একমাত্র বোর্ড প্রধান পাপনই তামিমকে বুঝিয়ে মাঠে ফেরাতে পারেন। নচেত নয়। এখন দেখার বিষয় পাপন তা কতটা চাইবেন?