নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজিত মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। মেলার শুরুর দিকে ক্রেতাদের চাপ কম থাকলেও ছুটির দিনে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। গত কয়েকদিনের তীব্র শীত উপেক্ষা করেই দুপুর থেকে দূর-দূরান্ত থেকে মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
শুক্তবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে সোনারগাঁ জাদুঘরে সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
বন্ধু-বান্ধব নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আমলাপাড়া থেকে মেলায় এসেছেন মোঃ হোসেন লিওন। তার সঙ্গে কথা হলে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, এটি দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। তাই মেলার সাক্ষী হতে এখানে এসেছি। বর্তমানে আমার চট্টগ্রামে থাকা হয়। তাই এখন প্রতিবছর এই মেলায় আসা হয় না। এবছর মেলায় আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।
নারায়ণগঞ্জের জামতলা থেকে মেলায় আসা আরাফাত চৌধুরী নামের এক দর্শনার্থী জানান, অন্যসব মেলার চেয়ে এই মেলার গুরুত্ব বেশি। এই সোনারগাঁ একসময় বারো ভুইঁয়ার রাজধানী ছিল। তাই বলা যায় এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি জায়গা। গ্রাম্য পরিবেশে সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র ক্রয় করার সুযোগ অন্যসব মেলাতে হয় না। এখানে যতোবারই আসি ততোই প্রশান্তি লাগে।
মোশারফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন বিথী রানী ভৌমিক। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নানা ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহের অন্যান্য দিন অবসর থাকা হয় না। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, এ মেলায় এসে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার এখানে আসা।
মেলার বিষয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে উপ-পরিচালক একেএম আজাদ সরকার বলেন, দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে আয়োজিত মাসব্যাপী এ লোক ও কারুশিল্প মেলায় কারুশিল্প প্রদর্শনী, লোকজীবন প্রদর্শন, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, গ্রামীণ খেলাসহ বাহারী পণ্য সামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন লোকজ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলা, কর্মরত কারুশিল্পীদের কারুপণ্যের প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, এবারের মেলায় তিন লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।
এবারের মেলায় কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ ১০০টি স্টাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতদশা ৬৪ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে মেলায় অংশ নেবেন। এছাড়া ১৭ জেলার কারুশিল্পীগণ মেলায় অংশ নিবেন। মেলায় বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কারুশিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ১৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী লোকজ উৎসব প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান লোকজ মঞ্চে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালীগান, জারি-সারিগান, হাছন রাজারগান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সঙ্গীত, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ নৃত্যনাট্য, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, মুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান, লোকগল্প বলা ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলা ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।