নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ডাকাত আখ্যা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বজনদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হন। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে আহত সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আসামিদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার সরকারের মেয়ে প্রভা সরকারকে (১৮) প্রায় ৬ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেন সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামের নাজিমউদ্দিনের ছেলে সাজিদ মিয়া (২৪)। প্রভা আড়াইহাজার নজরুল ইসলাম বাবু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও সাজিদ সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বিয়ের পর সাজিদ প্রভাকে দামোদরদী গ্রামে নিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে প্রভার পরিবারের লোকজন পুলিশ নিয়ে সাজিদের বাড়িতে যান। ১৮ বছর পূর্ণ হতে দুই মাস বাকি থাকায় প্রভাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেসময় বয়স পূর্ণ হলে আবারও তাদের বিয়ে দেওয়া হবে বলে শর্ত দেয় প্রভার পরিবার। কিন্তু বয়স পূর্ণ হওয়ার পর প্রভার পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রভা আবারও সাজিদের বাড়িতে চলে যান।এবারও প্রভাকে সাজিদের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হবে বলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। বাড়ি নেওয়ার পর কলেজছাত্রীকে পুনরায় অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলে গত ৯ জানুয়ারি বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রভা সাজিদের বাড়িতে চলে যান। রোববার (২১ জানুয়ারি) প্রভার মা-বাবা সাজিদের বাড়িতে মেয়েকে দেখার কথা বলে বেড়াতে আসেন।
কিন্তু সাজিদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়া পর মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে সাজিদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করে প্রভার বাবা আব্দুল গাফফার সরকার।মামলা দায়েরের পর আড়াইহাজার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নুরে আলম প্রভা সরকারকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে সাজিদের বাড়িতে যান। উদ্ধার অভিযানে সোনারগাঁ থানার এসআই মো. আলমগীর হোসেনসহ আরও তিন পুলিশ সদস্য সহযোগিতা করেন।
বিদ্যুৎ না থাকা অবস্থায় বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সাদা পোশাকে ৩ পুলিশ সদস্য দামোদরদী গ্রামের নাজিম উদ্দিন ওরফে নাজিমের বাড়ি থেকে সাজিদকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। সে সময় সাজিদ ডাকাত বলে চিৎকার করে ওঠেন।
একপর্যায়ে আত্মীয় স্বজন ও আশপাশের লোকজন এসে পুলিশের কাছ থেকে সাজিদকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে হামলাকারীদের আঘাত করতে থাকেন। এতে উত্তেজিত হয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা পুলিশের ওপর হামলা করে।
হামলায় সোনারগাঁ থানার এসআই মো. আলমগীর হোসেনের মাথা ফেটে যায়। এছাড়া আড়াইহাজার থানার সহকারী এএসআই নুরে আলম, কনস্টেবল পারভেজ ও প্রভার বাবা আব্দুল গাফফার আহত হন। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে, হামলার একপর্যায়ে প্রভা ও সাজিদ হ্যান্ডকাপসহ পালিয়ে যান। পরে হামলার খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হ্যান্ডকাপসহ পালিয়ে যাওয়া সাজিদের চাচা ইলিয়াস মিয়া (৪৮), প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর (৪২), আমজাদ হোসেন (৪০), মামুন (২৩), মারুফকে (১৮) আটক করে নিয়ে আসে। এই পাঁচজনসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁ থানার এসআই মো. আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আহসান উল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, জাঙ্গালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার মঙ্গলবার সকালে তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে মামলা দায়ের করা করেন। তার মেয়ের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু অভিযান চলাকালে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যায়।সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কলেজ ছাত্রী প্রভাসহ পুলিশের হ্যান্ডকাপ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।