স্টাফ রিপোটার ঃ
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে সেবা নিতে এসে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি কয়েকজন সেবাপ্রার্থী। ঘুষ দিতে না চাইলে সেবা প্রার্থীদের কোন কাজ করেনা তহশিলদার।
কাঠ পেন্সিল দিয়ে নানা সমস্যা লিখে রাখেন। আর ঘুষ দিলেই তা সমাধান হয়ে যায়। আর এখানকার বড় কর্তা অবৈধ উমেদাররা। তহশীলদারের অপসারণ চেয়ে ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ না পেলে একটি ফাইলও ছাড়েন না তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি একজনের জমি আরেকজনকে খারিজ দিয়ে চেক কাটেন এবং সংশোধনের নামে মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকেন। অফিসের এমএলএস আজগর আলী সব অপকর্মের হোতা বলে জানা গেছে। কয়েকজন অবৈধ উমেদাররা এখানকার কর্তাবাবু।
জানা গেছে, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। ভূমি অফিসে গিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। অনেকে দালালদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন। অনেকে আবার টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। দালাল টাকা নিয়েছে ঠিকই, তবে কাজ করে দেয়নি। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে নানা হয়রানির কথা জানা যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই কায়েতপাড়া ভূমি অফিসে ঘুষের কারবার চলছে সমানতালে। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘুষ লেনদেন। এখানে দালালদের সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
বৈধ কাজে গিয়েও প্রকৃত মালিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। অসাধু তহশিলদারকে ‘ম্যানেজ’ করে খারিজ পার করতে হয়। জমির মালিকরা টাকা দিয়েও জমি খারিজ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালাল উৎপাতও বেশি। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তবে টাকা দিলে তদন্ত প্রতিবেদন, সার্ভে রিপোর্ট আর নামজারি খতিয়ানের অবৈধ কাগজ বের করা কোনো ব্যাপারই না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাস জমি, একজনের জমি অন্যের নামে নামজারি করে দেয়াসহ নানা অনিয়ম হয় এ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। কায়েতপাড়া গ্রামের শুভ সরকার বলেন, ‘আমার বাবার জমির নামজারি করতে গেলে তহশিলদার ‘ক’ সম্পত্তি বলে ফেলে দেয়। পরে ১৫ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে নামজারি প্রস্তাব পাঠায়।
একই রকম অভিযোগ করেন নগরপাড়া গ্রামের রাসেল মিয়া। তিনি জানান, তার নামজারির কাগজপত্র এক উমেদারকে দিয়ে দেখায়। পরে উমেদার ‘ক’ সম্পত্তি বলে পেন্সিল দিয়ে লিখে দেয়। কয়েকদিন ঘুরার পর ১০ হাজার টাকা খরচা দিলে ‘ক’ সম্পত্তিই পরে নামজারি করে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, কায়েতপাড়া তহশিল অফিসে ৭ জন অবৈধ উমেদার। এসব উমেদাররা টাকার বিনিময়ে রেকর্ড রুমে নিয়ে গিয়ে ভলিউম দেখায়। টাকার বিনিময়ে ভলিউমের বইয়ের পাতা ছিঁড়ে দিয়ে দেয়। অনেক সময় গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়।
আইনের বিভিন্ন মারপ্যাঁচে ফেলিয়ে ও নানা সমস্যা বের করেন। যাতে ঘুষের টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হয় এ রকম অভিযোগ করেছেন আরিফুল হক, সুজন আহম্মেদ, সাত্তার হোসেনসহ আরো অনেকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তহশিলদার আতাউর রহমানের সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে কথা না বলে সরাসরি আসেন। নতুবা কথা বলা যাবে না। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিমন সরকার বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে