সিরিজ জিততে হলে ১৭৫ রান করতে হবে। লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় নয়। দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ ১৭০ রান পাড়ি দিয়েছিলো ১১ বল হাতে রেখে। আজ না হয় ৫ রান বেশি; কিন্তু ১৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ৪র্থ ওভারেই বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
স্বপ্ন শেষ করে দেন নুয়ান থুসারা। ১৯ বছর বয়সী এই লঙ্কান পেসারের বোলিং স্টাইল পুরোপুরি লাসিথ মালিঙ্গার মতো। ওভারের প্রতিটি বলই ইয়র্কার লেন্থের দেয়ার চেষ্টা করেন।তার ইয়র্কার লেন্থের বলই ভালোভাবে পড়তে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৪র্থ ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নিলেন পরপর তিন বলে। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
বাংলাদেশ যাদের ব্যাটে ভর করে জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো, ৪র্থ ওভারে পরপর তিন বলে তাদের উইকেট হারানোর পর সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। নুয়ান থুসারা শেষ পর্যন্ত ২০ রান দিয়ে নিলেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের কোমর যেভাবে তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা।বরং, শঙ্কা ছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৭০ রানের স্কোর পার হতে পারে কি না, তা নিয়েও। যদিও শেষ মুহূর্তে রিশাদ হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ ঝোড়ো ব্যাটিং করেছিলেন। রিশাদ ২৬ বলে করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু তার এই হাফ সেঞ্চুরি কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে শুধু। পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অলআউট হলো ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রানে। হার মানতে হলো ২৮ রানের ব্যবধানে।টস জিতে প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট করতে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট করতে নেমে কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের স্কোর গড়ে তোলে লঙ্কানরা। ৫৫ বলে ৮৬ রান করেন কুশল। ৬টি করে বাউন্ডারি এবং ছক্কার মার মারেন তিনি।
বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান অকাতরে রান দিয়েছেন। ৪ ওভারে তিনি দিলেন ৪৭ রান। ইকনোমি রেট ১১.৭৫ করে। রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে দেন ৩৫ রান। উইকেট নেন ২টি। তাসকিন ২৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। শরিফুল ২৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর থেকেই ধুঁকতে শুরু করে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ওপেনার লিটন দাস দু’বার জীবন পেয়েও ব্যর্থ হলেন। ১১ বলে ৭ রান করে আউট হলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে।
চতুর্থ ওভার তো রীতিমত দুঃস্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলো টাইগারদের সামনে। নুয়ান থুসারা এক ওভারেই ধ্বংসজজ্ঞ ডেকে আনেন। ১ উইকেটে ১৫ রান থেকে ৪ উইকেটে ১৫ রান। এরপর দেখতে দেখতে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান।
নুয়ান থুসারার ইয়র্কারে ৬ষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে বোল্ড হয়ে যান সৌম্য সরকার। ১০ বলে ১১ রান করেন তিনি। জাকের আলি অনিককে ঘিরে একটা আশা ছিল। কিন্তু সেটাও শেষ হয়ে গেলো, যখন দেখা গেলো ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে মাত্র ৪ রান (১৩ বল খেলে) করে আউট হয়ে যান তিনি।
সর্বনিম্ন স্কোরের মধ্যে যখন অলআউট হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়, তখন শেখ মেহেদী হাসান এবং রিশাদ হোসেন মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা দু’জন মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। ২০ বলে ১৯ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান। হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হন তিনি।
রিশাধ হোসেন ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করার পর ৩০ বলে ৫৩ রান করে আউট হন তিনি। তবে তার আগে গুনে গুনে ৭টি ছক্কার মার মারেন রিশাদ। বাউন্ডারি একটিও নেই। তাসকিন আহমেদও বেশ চালিয়ে খেলতে পেরেছিলেন। তিনিও ২টি ছক্কা এবং ৩টি বাউন্ডারির মার মারেন। ২১ বলে তিনি খেলেন ৩১ রানের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট টাইগাররা।শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে নুয়ান থুসারা ২০ রানে ৫ উইকেট নেন। ২ উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ১টি করে উইকেট নেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, মহেস থিকাসানা এবং দাসুন শানাকা। সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৭৪/৭, ২০ ওভার (কুশল মেন্ডিস ৮৬, শানাকা ১৯, হাসারাঙ্গা ১৫; তাসকিন ২/২৫, রিশাদ ২/৩৫)বাংলাদেশ: ১৪৬/১০, ১৯.৪ ওভার (রিশাদ হোসেন ৫৩, তাসকিন ৩১, মেহেদী হাসান ১৯; নুয়ান থুসারা ৫/২০, হাসারাঙ্গা ২/৩২)
ফল: শ্রীলঙ্কা ২৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ২-১ ব্যবধানে। ম্যাচ সেরা: কুশল মেন্ডিস।