বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বাজার খুঁজে বের করতে এবং সেখানে দেশের পাটপণ্য রফতানি করে উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার সম্ভাবনাকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি পাটকল ও ‘বহুমুখি পাটপণ্য মেলা-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে কৃষি ও রফতানি পণ্য হিসেবে পাটের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পাটের বহুমুখী উৎপাদন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাট কৃষিপণ্য, আবার শিল্পের কাঁচামাল, রফতানিও হয়। এটি কৃষিরও প্রণোদনা পায় না, আবার রফতানিরও প্রণোদনা পায় না। আমি পরিবেশবান্ধব এ পণ্যটিকে কৃষিজাত ও রফতানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেবো।’তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব পণ্যের (দেশে এবং বিদেশে) বিশাল বাজার থাকায় রফতানি বাড়াতে নতুন পাটজাত পণ্য আবিষ্কার এবং বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করুন।’
প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তা ও দেশ উভয়ের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পাট খাতের যথাযথ যত্ন নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি পাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বলছি, আমি একটি সম্পদ আপনাদের কাছে হস্তান্তর করেছি, এর যত্ন নিন। এর সঠিক ব্যবহারে আপনি এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’
যারা পাটকলের ইজারা পেয়েছেন তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনবেন এবং মিলগুলো যৌথভাবে পরিচালনা করবেন। তারা পাটকলগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনায় নজর রাখবেন।
তিনি বলেন, সোনালী আঁশ, সোনার বাংলা গড়ে তোলায় বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের সমৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সহায়ক হবে। এজন্য পাটের বহুমুখী ব্যবহারে নানা উদ্যোগ নেবো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক পাটকল অলাভজনক ছিল। সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিয়েছি। সম্পূর্ণ নগদ টাকা হাতে দেইনি। পারিবারিক সঞ্চয় করে দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবন করেছেন। আমি তাদের সুযোগ করে দিয়েছি। তাতে পাটের গুরুত্ব বেড়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার হয়। পাটের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র বানানো যায়। গাছের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে। এটি পরিবেশবান্ধব পণ্য হওয়ায় আমাদেরও সুযোগ বেড়েছে। এ পাট শিল্পকে কিভাবে আরও প্রসার করা যায় তার সুযোগ করে দিয়েছি। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে পারলে রফতানির পথ সুগম হবে। রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ আর এগোতে পারেনি। আমাদের সম্পদ সীমিত। এটাকে কাজে লাগাতে জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই পাটকে কাজে লাগাতে বঙ্গবন্ধুই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন। পাট আমাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। একে বলা হয় সোনালী আঁশ। পাট যেমন কৃষিপণ্য অন্যদিকে এটি ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল। কিন্তু এটি পরিবেশবান্ধব পণ্য। পাটের কোনো কিছুই ফেলা যায় না। পাটের সব কিছুই কাজে লাগে। কৃষক যে ক্ষেতে পাট চাষ করে, সেটায় আবার ধান চাষ করে। কারণ পাট পাতা পঁচে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০টি মিলের মধ্যে ছয়টি চালু করায় ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বাকি ১৪টি মিল চালু হলে আরও ২৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
নতুন খোলা ছয়টি পাটকল, যেগুলি বিজেএমসি দ্বারা ইজারা দেয়া হয়েছিল কিন্তু এখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে সেগুলি হচ্ছে- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলস লিমিটেড, নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের রায়পুরে জাতীয় জুট মিলস লিমিটেড, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং যশোরের রাজঘাটে কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড এবং খুলনার খালিশপুরে দৌলতপুর জুট মিলস লি.।
প্রধানমন্ত্রী পাট খাতের উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ১১ ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং ৯টি পাট সংশ্লিষ্ট সমিতির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। তিনি পরে পাটপণ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী এবং বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাতীয় পাট দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।