ভোগান্তির আরেক নামে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়। ডিভাইডারের গেট বন্ধ করে রাখায় গত কয়েকমাস ধরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঁচু ডিভাইডার পার হচ্ছেন এখানকার যাত্রীরা। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো মহাসড়কের মাঝেই যাত্রী নামিয়ে দেওয়ায় উঁচু ডিভাইডার টপকানো ছাড়া যাত্রীদের আর কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে হয় নারী ও বয়স্কদের। তবে এ নিয়ে এখনো স্থায়ী কোনো প্রদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি কর্তৃপক্ষের।
গত ১৭ মার্চ ডিভাইডারের দুই পাশে মই টানিয়ে ৫-১০ টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের ডিভাইডার পার করার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে সওজ কর্তৃপক্ষ এবং কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ। ওইদিন রাতেই টাকা উত্তোলনকারী রবিউলকে (২৬) গ্রেফতার করে চাঁদাবাজি মামলায় কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে বুধবার (২০ মার্চ) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসগুলো এখনো আগের মতো সড়কের মাঝেই যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিভাইডারের ওপর দিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছেন। তবে গত দুইদিন ধরে হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে বেশ তৎপর থাকায় অল্পসংখ্যক যানবাহন সার্ভিস লেনে যাত্রী নামাচ্ছেন। বাকিদের মামলা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না।তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান না বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক যাত্রী। তাদের মতে, পুলিশ যতক্ষণ মহাসড়কে থাকবে ততোক্ষণই বাসচালকরা এই নিয়ম মানবে। আবার পুরো মহাসড়ক জুড়েইতো পুলিশ থাকে না। তখন ওইসব পয়েন্টে যাত্রী নামিয়ে দেয় বাসচালকরা।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝিতে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো সরাসরি যেন ঢাকায় যেতে পারে সেজন্য চার লেনের ঢাকামুখী সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ থেকে কুয়েতপ্লাজা এলাকা পর্যন্ত উঁচু ডিভাইডার দিয়ে দুই লেন বিভক্ত করে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে আঞ্চলিক যানবাহন চলাচলের জন্য আরও দুই লেন রাখা হয়। এতদিন দূরপাল্লার লেন থেকে আঞ্চলিক লেনে যাত্রীদের চলাচলের জন্য সওজ কার্যালয়ের সামনে একটি গেট খোলা রাখা হতো। ওইখানে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো শিমরাইল মোড়ের যাত্রীদের নামিয়ে দিতো। কিন্তু গত দুইমাস ধরে তা বন্ধ করে রেখেছে সহজ কর্তৃপক্ষ। তবে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো এখনো সেই স্থানেই যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। এই গেটের আশপাশে যাত্রী পারাপারের আর কোনো গেট না থাকায় যাত্রীরা উঁচু ডিভাইডারের ওপর দিয়েই পারাপার হচ্ছেন। পুরুষ যাত্রীরা কোনোভাবে এটি পার হতে পারলেও নারী যাত্রীদের অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এভাবে পার হতে গিয়ে অনেক যাত্রীকেই আঞ্চলিক লেনে চলাচল করা বাসের সামনে পড়ে যেতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটার শঙ্কা থাকে।আমেনা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডিভাইডারের গেট বন্ধ রাখায় আমাদের অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসগুলো আমাদের মহাসড়কের মধ্যে নামিয়ে দেয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না আমাদের।আল আমিন হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, দূরপাল্লার বাসচালকদের কেন সার্ভিস লেন দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য করা হচ্ছে না? এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।
জাহাঙ্গীর বেপারী নামের এক যাত্রী বলেন, মই দিয়ে পারাপারে টাকা নিলেও আমার মতে এটা নারী ও বয়স্কদের জন্য অনেক উপকারই হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা কীভাবে এই ডিভাইডার পার হবে। এই সমাধান কী কারো কাছে আছে, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পরিবহন চালকরা বলেন, আঞ্চলিক লেনে বাস প্রবেশ করলেই দীর্ঘক্ষণ আমাদের যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হয়। তখন দূরপাল্লার যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ কারণে আমাদের সার্ভিস লেনে চলাচল করা সম্ভব হয় না। যদি সড়ক বিভাজকের একটি অংশে যাত্রী পারাপারের জন্য ফাঁকা রাখা হয় তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হয় না। এখানে আমাদের কী করার আছে।জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই একেএম শরফুদ্দিন বলেন, মহাসড়কের মাঝে যাত্রী নামানোর প্রেক্ষিতে গত দুদিনে আমরা ৭৮টি যানবাহনকে মামলা দিয়েছি। আজ সকাল থেকেও সাত সদস্যের একটি টিম মহাসড়কে অবস্থান করেছেন। তবে এভাবে মামলা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এক্ষেত্রে যাত্রী ও বাস চালকদের উভয়েরই সচেতন হতে হবে। তবে এর স্থায়ী সমাধান নিতে আমরা সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। আমরাও পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিবহনগুলোকে সার্ভিস লেন দিয়ে চলাচলে বাধ্য করলেও তারা তা শুনছে না। আর ডিভাইডারের একটি অংশ ফাঁকা রাখা হলে ওই স্থানে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো স্ট্যান্ড বানিয়ে যানজটের সৃষ্টি করবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিগগিরই ডিভাইডারের কাঁচপুর থেকে কুয়েত প্লাজা অংশ পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে। যেনো মহাসড়কে মধ্যে বাসচালকরা আর যাত্রী নামাতে না পারেন।