নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জ বন্দরের অন্যতম কুখ্যাত রাজাকার রফিকের পুত্র মাকসুদ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বন্দরের কতিপয় আওয়ামীলীগ নামধারী অনুপ্রবেশকারী নেতারা।
আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রচারণা করতে দেখা গেছে কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ছেলে মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে।
তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে মদনপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের বহিঃস্কৃত সভাপতি ও আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ কারী নেতা ও অবৈধ মা হাসপাতাল পরিচালনাকারী শেখ রুহুল আমিন,মদনপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের বহিষ্কার হওয়া সভাপতি ফারুক আহম্মেদ ও তার বোন জামাই অবৈধ তিতাস গ্যাস সরবরাহ কারী দালাল ও বিএনপি নেতা কাওসার,২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম সহ একটি মহল।
মদনপুরের স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়,
মদনপুর চৌরাস্তায় মহাসড়কে হকার বসিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করছে আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক আহম্মেদ। মদনপুরের মাদক সম্রাজ্ঞী মাফিয়া আক্তার তানিয়াকে দিয়ে ফ্লাটে দেহ ও মাদক ব্যবসায়ও জড়িত এই আওয়ামীলীগ নেতা।তাছাড়া ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য মাসুম আহম্মেদের স্ত্রী ও মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজাকার পুত্রের স্ত্রী নার্গিস মাকসুদের সাথেও সক্ষতা রয়েছে ফারুক আহম্মেদের। শ্রমীকলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে মদনপুরে মা হাসপাতাল নামে একটি অবৈধ হাসপাতাল চালাচ্ছে শেখ রুহুল আমিন।ইতিপূর্বে শেই হাসপাতালে ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার সহ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও অদৃশ্য কারণে জেলার সিভিল সার্জন মদনপুরের এই অবৈধ মা হাসপাতালে কোন অভিযান পরিচালনা করছে না বলে জানান এলাকাবাসী। ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম রাজাকার পুত্রের পক্ষে গিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালামের বিপক্ষে কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তাছাড়া স্থানীয় সূত্র মতে জানা যায়,সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারী টিসিবি পণ্য বিতরণে অনিয়ম দূর্নীতি করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গতকাল তার ভাতিজার বাড়ী থেকে ৬টি চোরাই অটোরিকশা উদ্ধার করে প্রশাসন।এতোসব অপকর্মের পরও আওয়ামীলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনকে নির্বাচিত করার মিশনে নেমেছেন কাউন্সিলর সিরাজ ওরফে গরু সিরাজ।
বন্দরের তৃণমূলের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,অনতি বিলম্বে রাজাকারের
পক্ষে যেসব আওয়ামীলীগের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণা করছে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক। তারা আওয়ামীলীগের দলে থাকার কোন যোগ্যতা রাখে না।জেলা উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের অনুরোধ এসব রাজাকারের উত্তরসূরীদের যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্রমীকলীগের নেতা শেখ রুহুল আমিনকে তার মোবাইলে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
বন্দরের মুক্তিযোদ্ধা ও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতারা জানান,
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টায় রাজাকার রফিক। কিছুদিন আত্মগোপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায়, আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তোলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে। আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। রাজাকার রফিকের
ছেলেদের বিরুদ্ধে বন্দর থানা সহ দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা,চাঁদাবাজি,নারী নির্যাতন,মাদক,অস্ত্র মামলা সহ একাধিক মামলা হয়েছে। তাছাড়া রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের ছেলে শুভ এর বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা,চাঁদাবাজি ও অপহরণ সহ একাধিক মামলা হওয়ার কারণে সারা বন্দর জুড়ে তারা আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।
রাজাকার পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়া শেখ রুহুল আমিন ও ফারুক আহম্মেদের বিরুদ্ধে কেনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন”আওয়ামীলীগের কোন পদে থেকে কোন ভাবেই একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে গিয়ে রাজাকারের ছেলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ অংশ নিতে পারবে না।যারা এমন নেক্কারজনক কাজ করছে আমি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলবো। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের আমলে কুখ্যাত রাজাকারের সন্তানরা কিভাবে রাজত্ব করে এটা আমারও প্রশ্ন।
বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ বলেন” যে বা যারা আওয়ামীলীগের পদ ব্যবহার করে রাজাকার পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দীন এ বিষয়ে বলেন”বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যে নামধারী নেতারা রাজাকার পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করবে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও মদনপুর ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালাম বলেন”মহান স্বাধীনতার মাস এই মার্চের আর মাত্র ৩ দিন সময় আছে। এই তিন দিনের মধ্যে যদি ওই আওয়ামীলীগের নেতারা যারা রাজাকার পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে তারা যদি ক্ষমা চেয়ে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ সাহেবের পক্ষে না আসেন তাহলে আমি চাই তাদেরকে স্থায়ী ভাবে সকল সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হোক। কারণ তারা ইতিপূর্বে আমি মদনপুরে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হওয়ার পরও তারা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে বহিষ্কার হয়েছিলেন।পরবর্তীতে তারা ক্ষমা চেয়ে আবারও স্বপদে বহাল হোন।কিন্তু পরিতাপের বিষয় কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা আবারও আওয়ামীলীগের পদ বহন করে আওয়ামীলীগের বিপক্ষে গিয়ে একজন কুখ্যাত রাজাকার পুত্রের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছে। আমি চাই যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিপক্ষে গিয়ে দেশে রাজাকারদের উত্তরসূরীদের সঙ্গ দেয় তারা কখনো আওয়ামীলীগের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।তাই তাদের আওয়ামীলীগের সকল পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক।