ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়ে যাবে আগামী ১৯ এপ্রিল। ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেখানে রাজ্যস্তরে বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যসরকার তৈরি হয়। আর লোকসভা বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি হয় কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক বা জাতীয় দলের সরকার থাকলেও কেন্দ্রে আছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদী সরকার। যার নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ২৭২টি আসন। সাত ধাপে ৪৪ দিন ধরে চলবে এই নির্বাচন। ১৯ এপ্রিল ভোট শুরু হয়ে শেষ হবে ১ জুন। ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।
প্রথম ধাপে ১৯ এপ্রিল ভোট হবে ১০২ আসনে, দ্বিতীয় ধাপে ২৬ এপ্রিল ৮৯ আসনে, তৃতীয় ধাপে ৭ মে ৯৪ আসনে, চতুর্থ ধাপে ১৩ মে ৯৬ আসনে, পঞ্চম ধাপে ২০ মে ৪৯ আসনে, ষষ্ঠ ধাপে ২৫ মে ৫৭ আসনে এবং শেষ ধাপে ১ জুন ৫৬ আসনে।
১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্র সরকার গঠনের জন্য ভোট দেবেন প্রায় ৯৭ কোটি ভারতীয়। সেই অর্থে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম জাতীয় নির্বাচন।
লোকসভা নির্বাচনে আজকের আলোচ্য বিষয় পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি লোকসভা আসন। উত্তর প্রদেশের ৮০টি ও মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় আসনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।
এই রাজ্যের বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২০১৩ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্কাসম, আন্দোলনের মাঠ গরম করতে কীর্তিমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে লড়াই করছে বিজেপি। বিধানসভার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একচ্ছত্র দাপট থাকলেও লোকসভায় গত নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়।২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৩৪টি আসন, ভোট পায় ৩৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ২২টি আসন, ভোট পায় ৪৩ শতাংশ।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় দুটি আসন, ভোট পায় ১৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় ১৮টি আসন, ভোট পায় ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি আসন পেলেও ২০১৯ সালে তার আসন সংখ্যা কমে হয় ২২টি। বিজেপি ১৮টি আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে তার জাগরণ জানান দেয়।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস একাধিপত্য বজায় রাখে।
বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ২১১টি আসন ও ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট এবং ২০২১ সালে ২১৩টি আসন ও ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পায়।
বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৬ সালে বিজেপি তিনটি আসন ও ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট এবং ২০২১ সালে ৭৭টি আসন ও ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পায়।
ভোটের এই হিসাবে দেখা যায়, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট ও আসন সংখ্যা বাড়লেও তা রাজ্যে তৃণমূলের একাধিপত্যকে খর্ব করতে পারেনি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট ও আসন সংখ্যা তৃণমূলকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেস ভোটব্যাংক খুইয়ে ফেলেছে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তারা পশ্চিমবঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে জোরেসোরেই। তরুণদের একাংশকে তারা রাজনীতিতে উৎসাহী করে তুললেও তাদের সম্মিলিত ভোট লোকসভায় নিজেদের আসন লাভ নিশ্চিত করবে, নাকি বিজেপি কিংবা তৃণমূলকে লাভবান করবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়েই রয়েছে।