নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধকালে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ৬০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফায় এ সংঘর্ষের ঘটে। পরে পুলিশ ও গার্মেন্টস মালিক নেতারা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।গুলিবিদ্ধরা হলেন আব্দুর রাজ্জাক (৩৩) ও মোছা. চাঁদনী খাতুন (২৪)। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। এছাড়া অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি।শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিকপক্ষের কাছে তাদের তিন মাসের বেতন-ঈদ বোনাস পাওনা রয়েছে। মালিকপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তা পরিশোধ করেনি। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ দেখতে পান। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে শ্রমিকদের ফ্যাক্টরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পঞ্চবটী-মুক্তারপুর সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা রাস্তায় খুঁটি ফেলে ও প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিলে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন।
ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ জল কামান নিয়ে উপস্থিত হলে উত্তেজিত শ্রমিকরা তা ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়লে শ্রমিকরা কিছুটা পিছু হটলেও পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে। পরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ এসে মাইকে শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার আহবান জানায়। বেতন-ভাতা নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে শান্ত হয় শ্রমিকরা।
অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেডের কর্মী জারিদুল মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়েছে। এতে আমাদের অন্তত ৫০ জনের অধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন।কারখানাটির সুইং অপারেটর মাসুদ বলেন, এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি মালিকপক্ষ। গত আট মাস ধরে বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ।
সুমাইয়া নামে আরেক নারী শ্রমিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ঈদের আগে বেতন না পাওয়ায় গ্রামে যেতে পারিনি। আমরা যারা ক্রোনীর শ্রমিক তাদের কোনো ঈদ বা উৎসব ভাতা নাই। প্রতি মাসে বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়।ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি বলেন, ঈদের আগে সব শ্রমিকদের বোনাস দিয়েছি কিন্তু শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। আগামী বুধবারের মধ্যে সকলের বেতন পরিশোধ করে দেওয়া হবে। তারপরও শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে।ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল। এসময় তাদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার কথা বললে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।শিল্প পুলিশ-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার আইনুল হুদা বলেন, শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের থামাতে চেষ্টা করে। এসময় তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।