বিশেষ সংবাদ: স্বাধীনতার পূর্বে বর্তমান ধামগড় ও মদনপুর ইউনিয়ন নিয়ে ছিলো অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ। তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার এম.এ রফিক। যে কিনা স্বাধীনতার পরেও ওই এলাকাটি মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখে ছিলো। পরবর্তীতে তার দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন ও মাকসুদ হোসেন মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে বাবার মত তারাও মুছাপুরকে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছে। সেই মাকসুদের দৃষ্টি এখন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের চেয়ারে।আগামী ৮মে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে মোট ৪জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইটা তিনজনের জনের মধ্যে। যার মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ রশিদ। বাকি দুজনের একজন হলো কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ছেলে মাকসুদ হোসেন , অপরজন হলে কুখ্যাত রাজাকার লতিফ সর্দারের ভাতিজা। সেই হিসেবে এবারে বন্দর উপজেলার নির্বাচনকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষের লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করছে সাধারণ ভোটারা। মাকসুদ পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভ ড্যামী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছে।মাকসুদ হোসেন ছিলেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পদত্যাগ করে উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহ বিভিন্ন মানুষের জমি জবর দখল, নদী দখল, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসার শেল্টার দেয়া, মারপিট, চাঁদাবাজি, হোন্ডাবাহিনীর মোহরা সহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মুছাপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। ভয়ে কেউ তার এবং তার ছেলে শুভ বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়না। জুলুম নির্যাতন, হত্যা খুন বর্বরতায় এই পরিবারটির ইতিহাস অনেক পুরনো। মাকসুদ হোসেনের পূর্বসূরীদের অতীত কিছু অপকর্মের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো, মাকসুদের বাবা চাচা সবাই রাজাকার ছিল:
মাকসুদের বাবা কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ঘৃণিত কর্মকান্ডের ইতিহাস সবারই জানা। রফিকের বাকি ভাইয়েরাও নাম লিখিয়েছিলেন রাজাকারের খাতায়। মাকসুদের চাচাতো ভাই ও সেকেন্ড ইন কমান্ড ইকবাল হোসেন তার সাথে ছায়ার মত লেগে থাকে। রাজাকার আব্দুস সামাদের ছেলে এই ইকবাল হোসেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মাকসুদের দাদা ছিলেন মাঈনুদ্দিন। ওনার ৪ ছেলে রফিক হোসেন, আব্দুল মালেক, আব্দুস সামাদ, ও গোলাম মোস্তফা। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে রফিক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ঠিকাদার, আব্দুল মালেক ছিলেন আদমজি জুট মিলের একজন লাইন সর্দার। এছাড়াও আব্দুস সামাদ ও গোলাম মোস্তফা অন্য পেশায় জড়িত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা সবাই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকারের খাতায় নাম লেখায়। যুদ্ধের সময় রাজাকার গোলাম মোস্তফাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে হত্যা করেন বলে শোনা গেছে।ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’, ‘শান্তিকমিটি ১৯৭১’ ও রীতা ভৌমিকের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ’ বইয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজাকারদের তালিকা থেকে রফিক, আব্দুস সামাদ, আব্দুল মালেক ও গোলাম মোস্তফার নাম পাওয়া গেছে। যাদের উভয়ের পিতা হলেন মাঈনুদ্দিন।মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক বই এবং গবেষনাগ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক ছিলো অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। স্বাধীনতার পরেও ধামগড় ইউনিয়নে এই রাজাকার ও তার পরিবারের লোকজনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত ছিল। তাদের এই দুর্ধর্ষ কর্মকান্ড নিয়ে ২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ‘নারায়ণগঞ্জ ৩০ বছরেও রফিক বাহিনীর সন্ত্রাস কমেনি’ ধামগড়ের মানুষ আতঙ্কিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে কুখ্যাত রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসী ছেলেদের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে, রফিক রাজাকারের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ছেলেদের একের পর এক হত্যাকান্ড, মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা, যুদ্ধের সময় ১৮টি গ্রাম আগুনি জ্বালিয়ে দেওয়া অসংখ্য আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা সহ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও রাজাকার রফিক ও তার ৪ পক্ষে ৮ ছেলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অগাধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়ে ছিলো, স্বাধীনতার পর রাজাকার রফিক ও তার পরিবার দ্বারা সংগঠিত হওয়া হত্যাকান্ডের সংক্ষিপ্ত বনর্না:
১৯৯৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী লাঙ্গলবন্দ চিড়ইপাড়া এলাকায় রাজাকার রফিক, তার ছেলে আনোয়ার, মাকসুদ হোসেন, মুন্সি, মোয়াজ্জেম হোসেন কালু, ভাগিনা বিল্লাল মিলে প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভুইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় উল্লেখিতদের আসামী করে বন্দর থানায় মামলা এয় মামলা নং ১১ (২)৯৪।
১৯৯২ সালের ২২ আগস্ট রাজাকার রফিকের ছেলে মাকসুদের বড় ভাই কালুর সাথে গরুর মাংস কেনা নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটির হলে, নিরীহ কসাই নবী হোসেনকে কেটে টুকরো টুকরো কওে বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মাকসুদের ভাই আনোয়ার, মোর্শেদ মুন্সী, কালু, ভাগিনা বিল্লাল কে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং- ২২(৮)৯২।
২০০৩ সালে অক্টোবর মাসে লাঙ্গলবন্দের যোগী পাড়া এলাকার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল কাজীর ছেলে যে কিনা সম্পর্কে মাকসুদের চাচাতো শ্যালক মহসিনকে নৃশংস ভাবে খুন করে। তার মাথা কেটে উপস্থিত মানুষের সামনে কাটা মাথা দিয়ে কুড়িপাড়া স্কুল মাঠে ফুটবল খেলেছিলো। এ ঘটনায় মাকসুদের ভাই আনোয়ার, ভাগিনা বিল্লাল, ভাগনী জামাই (সাত খুনের আসামী) সেলিমকে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং -৭(১০)০৩। সামান্য বাস ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার জের ধর রাজাকার পুত্র মাকসুদের তাই আনোয়ার, ভাগিনা বিল্লাল, ফুপাতো ভাই সালাউদ্দীন ওই বাস মালিক পাঠানটুলি এলাকার মোশারফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।১৯৯৮ সালে জুন মাসে রাজাকার পুত্র মাকসুদের ভাই আনোয়ার, ভাগ্নি জামাই সেলিম মদনপুর চাঁনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার জুলহাসকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলা নং ১৯/৬/৯৮।১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসে সেলিম, আনোয়ার, বিল্লাল তিন জন মিলে আদমজী মিলের শ্রমিক, সুরু মিয়াকে চাঁদার জন্য আদমজী জুট মিল ঘাট থেকে বিকেল ৫টায় কুড়িপাড়া ধরে নিয়ে আসে, নদীর পাড়ে নৌকায় রেখে তার দুই হাত বগল পর্যন্ত কেটে নেয়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ০৯ (০৮)৯৮। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসামীদের ১৭ বছর সাজা প্রদান করেছিলেন।২০০৩ সালের অক্টোবার মাসে মাকসুদের ফুফাত ভাই সালাউদ্দিন মুরাদপুর এলাকার নিলুফাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ৪(১০)০৩। এছাড়াও ২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুরাদপুর এলাকায় নূরা ও বাবুল নামের দুই সহদোর ভাইকে হত্যা করে মাকসুদের ভাগ্নি জামাই সালাউদ্দিন। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং-৩৪(৩)০৩ মাকসুদের চাচা মতিন, রাজাদার মালেক, সামাদ রাজাকারের ছেলে ইকবাল মাকসুদের প্ররোচনায় চাপাতলি গ্রামের নান্নু কাঠ মিস্ত্রির ছেলে মনির হোসেন কে হত্যা করে। নান্নু ছিল মতিনেরই ফার্নিচার হাউজের মিস্ত্রি। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।