হিন্দু পঞ্জিকার বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় পুণ্য লাভের আশায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সমুদ্রস্নান করেছেন। শুক্রবার (১০ মে) আন্তর্জাতিক হরিভাবনামৃত সংঘ ও আশ্রমের অক্ষয় তৃতীয়াব্রতম সনাতন ধর্ম সম্মেলনের আয়োজনে ভোর ৫টা থেকে আহ্বানী, সমবেত প্রার্থনা, মঙ্গলঘাট স্থাপন, শ্রী শ্রী বিষ্ণ পূজা, গঙ্গা মায়ের পূজা শেষে বেলা ১১টায় সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়।
তাদের বিশ্বাস, এটি হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। এই শুভ দিনে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নিয়েছিলেন। এজন্য দিনটি পরশুরামজয়ন্তী হিসেবেও পালন করা হয়। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়। এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে সানাতন ধর্মাবলম্বীরা পুণ্যস্নানে আসেন। এ সময় হাজারো মানুষের কোলাহলে মুখরিত হয় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এ সময় সৈকতে দেখা যায় অনেকেই স্নান শেষে পরিবার নিয়ে গীতা পাঠ করছেন, আবার কেউ প্রার্থনাসহ ধর্মীয় রীতিনীতিতে মগ্ন হয়েছেন।বরিশাল থেকে আগত সাগর বিশ্বাস বলেন, ‘এই দিন স্নান করলে অক্ষয় পুণ্য অর্জন করা যায়। এই তিথিতে স্নান করলে জীবন থেকে দুঃখ, রোগব্যাধি একেবারে মুছে যায় এবং জীবন সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে।’কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক শ্রী নিহার রঞ্জন বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো আজকেও এই অক্ষয় তৃতীয়ার অনুষ্ঠানটি যথাযোগ্য মর্যাদায় আমরা পালন করছি। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা পাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সকল ভক্তদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা এখানে রাখা হয়েছে।’ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। তাই আমরা বাড়তি নজরদারি রেখেছি। সাদা পোশাকেও আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’কলাপাড়া পৌর মেয়র শ্রী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক হরিভাবনামৃত সংঘ ও আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ শ্রী শ্রী জয়দেব ঠাকুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরের সহধর্মিণী জগৎমাতা হরপ্রিয়া দেবী ও পরমপূজ্যপাদ ঋত্বিক মহারাজ ডা. রাধাস্বামী।এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক হরিভাবনামৃত সংঘ ও আশ্রমের সভাপতি ও বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পরিতোষ রায়, ঝালকাঠি নলছিটি উপজেলার চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে ভাগবত আলোচনা রাখেন কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক শ্রী নিহার রঞ্জন, ভক্ত প্রভাষক শ্রী সঞ্জয় মণ্ডল, ভক্ত শ্রী শ্যামল চন্দ্র মালো, ভক্ত শ্রী গোবিন্দ দেবনাথসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জয়দেব ভক্তবৃন্দ।