স্টাফ রিপোর্টার: তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি, সেই সাথে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জের ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের আর্শীবাদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্ব›দ্ধীতায় তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিভিন্ন সভা মঞ্চে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার আলবদর ও তাদের দূষরদের বিরুদ্ধে বক্তব্যে তিনি ঝড় তুলেছেন। মোটাদাগে তিনি নিজেকে একজন বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির মানুষ হিসেবেই জাহির করে থাকেন। কিন্তু গতকাল ৩০জুন দেখা মিললো তাঁর ভিন্ন একরূপ। এদিন তিনি জেলা পরিষদ কার্যালয়ে বন্দর উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরন করে নিয়েছেন।
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’, ‘শান্তিকমিটি ১৯৭১’ ও রীতা ভৌমিকের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ’ বইয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজাকারদের তালিকা থেকে মাকসুদ হোসেনের রফিক, চাচা আব্দুস সামাদ, আব্দুল মালেক ও গোলাম মোস্তফার নাম পাওয়া গেছে। যাদের উভয়ের পিতা হলেন মাঈনুদ্দিন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক বই এবং গবেষনাগ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক ছিলো অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। স্বাধীনতার পরেও ধামগড় ইউনিয়নে এই রাজাকার ও তার পরিবারের লোকজনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত ছিল।
জানা গেছে, গত ৮মে অনুষ্ঠিত হয়েছে বন্দর উপজেলার নির্বাচন। ওই নির্বাচনের পূর্বে বন্দরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদের পক্ষে বেশ কয়েকটি প্রচারনায় অংশ নিয়ে ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল। সে সময় তিনি বন্দরের সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বিএনপি জামায়াতের সমর্থক ও রাজাকারের বংশধরদের প্রত্যাখান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ভোট দেওয়ার আহবান রেখে ছিলেন।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ বাদল ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলে ছিলেন কেউ যদি ভোটের আগে আপনাদের টাকা দিতে চায়। তাহলে আপনারা টাকাটা নিবেন কিন্তু ভোটটা দিবেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে। বন্দরকে মিনি পাকিস্তান হতে দিবেন না। জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদলের সুরেই বক্তব্য রেখে ছিলেন ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির সভাপতি বাবু চন্দন শীল। যিনি কিনা সব সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের কথা বলেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রশ্নে যিনি আপোষহীন। সেই চন্দন শীল কিনা রোববার ৩০ জুন কুখ্যাত রাজাকার রফিকের পুত্র মাকসুদ হোসেনকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। যেই মাকসুদ হোসেনের পরিবারের হাতে লেগে আছে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন সহ ১৮জন আওয়ামী লীগ নেতাকে খুনের রক্ত।
রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনকে ফুল দিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীলের ফুল দিয়ে বরন করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করেছে মাকসুদ হোসেনের অন্যতম সহযোগী মাকসুদের চাচাতো ভাই রাজাকার সামাদের ছেলে ইকবাল হোসেন। মুহুর্তেই সেই ছবি ভাইরাল হয়ে গেলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীলের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রথমে বলেন তিনি মোবাইলে কোন বক্তব্য দেন না।